১৭৯৩ সালে বৃটিশ শাসন আমলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত আইনের ফলে জমিদারদের জমিদারি সুদৃঢ় হয়। উপমহাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে একজন করে জমিদারকে সেই অঞ্চলের জমির মালিকানা প্রদান করা হয়। জমিদাররা সেই অঞ্চলের অধীনস্ত প্রজাদের কাছে জমির খাজনা আদায় করতেন এবং সেই খাজনা জমিদারদের মাধ্যমে পৌঁছাত বৃটিশ শাসকদের কাছে।
হরিপুরে জমিদারির ইতিহাস
আনুমানিক ১৪০০ খ্রিস্টাব্দে ঘনশ্যাম কুন্ডু নামক একজন ব্যবসায়ী এন্ডি কাপড়ের ব্যবসা করতে হরিপুরে আসেন। সেই সময় মেহেরুন্নেসা নামে এক বিধবা মুসলিম মহিলা এ অঞ্চলের জমিদার ছিলেন। তাঁর বাড়ি হরিপুরের মেদিনীসাগর গ্রামে। জমিদারির খাজনা দিতে হতো তাজপুর পরগনার ফৌজদারের নিকট। খাজনা অনাদায়ের পড়ার কারণে মেহেরুন্নেসার জমিদারির কিছু অংশ নিলাম হয়ে গেলে ঘনশ্যাম কুন্ডু কিনে নেন।
নির্মাণের ইতিহাস
ঘনশ্যামের পরবর্তী বংশধরদের একজন রাঘবেন্দ্র রায় ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে বৃটিশ আমলে হরিপুর রাজবাড়ির কাজ শুরু করেন। কিন্তু তাঁর সময়ে রাজবাড়ির সমস্ত কাজ শেষ হয়নি। রাঘবেন্দ্র রায়ের পুত্র জগেন্দ্র নারায়ণ রায় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে রাজবাড়ির নির্মাণ কাজ শেষ করেন। এসময় তিনি বৃটিশ সরকার কর্তৃক রাজর্ষি উপাধিতে ভূষিত হন।
১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশ ভারত ও পাকিস্থান দুটি দেশে বিভক্ত হয়ে গেলে পাকিস্থান অঞ্চলের হিন্দু জমিদাররা নিজ বাড়ি ছেড়ে ভারতে চলে যায়। সেই প্রেক্ষিতে হরিপুর রাজবাড়ির জমিদার জগেন্দ্র নারায়ণ রায় পরিবারসহ ভারতের রায়গঞ্জে পালিয়ে যায়।
৩ একর ২৭ শতক জমির উপর এই জমিদার বাড়িটি। জমিদারি পরিচালনার জন্য কাচারী, ধর্মীয় উৎসবের জন্য বিভিন্ন উপাসনলয়, বিনোদনের জন্য নাচমহল, নাগমহল, অন্দরমহল ও অন্ধকূপ ইত্যাদি স্থাপন করেছিলেন।জগেন্দ্র নারায়ণ রায়ের সমাপ্তকৃত রাজবাড়ির দ্বিতল ভবনে লতাপাতার বিভিন্ন নকশা এবং পূর্ব দেয়ালের উপরে রাজর্ষি জগেন্দ্র নারায়ণের চৌদ্দটি আবক্ষ মূর্তি আছে। তাছাড়া ভবনটির পূর্বপাশে একটি শিব মন্দির এবং মন্দিরের সামনে নাট মন্দির রয়েছে। রাজবাড়িতে একটি বিশাল পাঠাগার ছিলো যেটি কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। রাজবাড়িটির যে সিংহদরজা ছিল তাও নিশ্চিহ্ন হয়েছে।
১৯০০ সালের দিকে ঘনশ্যামের বংশধররা বিভক্ত হলে হরিপুর রাজবাড়িও দুটি আলাদা অংশে বিভক্ত হয়ে যায়। রাঘবেন্দ্র-জগেন্দ্র নারায়ণ রায় যে বাড়িটি তৈরি করেন তা বড় তরফের রাজবাড়ি নামে পরিচিত। এই রাজবাড়ির পশ্চিমদিকে নগেন্দ্র বিহারী রায় চৌধুরি ও গিরিজা বল্লভ রায় চৌধুরি ১৯০৩ সালে আরেকটি রাজবাড়ি নির্মাণ করেন যার নাম ছোট তরফের রাজবাড়ি।
জরাজীর্ন অবস্থায় পড়ে আছে এখন এই হরিপুর রাজবাড়িটি। সরকার সংস্কারের উদ্যোগ নিলে এই রাজবাড়িটি হতে পারে পর্যটনের একটি অন্যতম স্থান। হরিপুরবাসীর প্রত্যাশা অতিসত্যর এটিকে সংস্কার করে গড়ে তোলা হবে একটি পর্যটন স্থান হিসেবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন