সোমবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর রাজবাড়ির ইতিহাস

মুঘলরা ভারতীয় উপমহাদেশ দখল করে শাসন শুরু করার পর জমিদারি প্রথা চালু হয়। ভূমি রাজস্ব আদায়ের জন্য উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তারা জমিদার নিয়োগ করেন।

১৭৯৩ সালে বৃটিশ শাসন আমলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত আইনের ফলে জমিদারদের জমিদারি সুদৃঢ় হয়। উপমহাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে একজন করে জমিদারকে সেই অঞ্চলের জমির মালিকানা প্রদান করা হয়। জমিদাররা সেই অঞ্চলের অধীনস্ত প্রজাদের কাছে জমির খাজনা আদায় করতেন এবং সেই খাজনা জমিদারদের মাধ্যমে পৌঁছাত বৃটিশ শাসকদের কাছে।

হরিপুরে জমিদারির ইতিহাস
আনুমানিক ১৪০০ খ্রিস্টাব্দে ঘনশ্যাম কুন্ডু নামক একজন ব্যবসায়ী এন্ডি কাপড়ের ব্যবসা করতে হরিপুরে আসেন সেই সময় মেহেরুন্নেসা নামে এক বিধবা মুসলিম মহিলা অঞ্চলের জমিদার ছিলেনতাঁর বাড়ি হরিপুরের মেদিনীসাগর গ্রামে। জমিদারির খাজনা দিতে হতো তাজপুর পরগনার ফৌজদারের নিকট। খাজনা অনাদায়ের পড়ার কারণে মেহেরুন্নেসার জমিদারির কিছু অংশ নিলাম হয়ে গেলে ঘনশ্যাম কুন্ডু কিনে নেন

নির্মাণের ইতিহাস
ঘনশ্যামের পরবর্তী বংশধরদের একজন রাঘবেন্দ্র রায় ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে বৃটিশ আমলে হরিপুর রাজবাড়ির কাজ শুরু করেন কিন্তু তাঁর সময়ে রাজবাড়ির সমস্ত কাজ শেষ হয়নি রাঘবেন্দ্র রায়ের পুত্র জগেন্দ্র নারায়ণ রায় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে রাজবাড়ির নির্মাণ কাজ শেষ করেন এসময় তিনি বৃটিশ সরকার কর্তৃক রাজর্ষি উপাধিতে ভূষিত হন
১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশ ভারত ও পাকিস্থান দুটি দেশে বিভক্ত হয়ে গেলে পাকিস্থান অঞ্চলের হিন্দু জমিদাররা নিজ বাড়ি ছেড়ে ভারতে চলে যায়। সেই প্রেক্ষিতে হরিপুর রাজবাড়ির জমিদার জগেন্দ্র নারায়ণ রায় পরিবারসহ ভারতের রায়গঞ্জে পালিয়ে যায়।

৩ একর ২৭ শতক জমির উপর এই জমিদার বাড়িটি। জমিদারি পরিচালনার জন্য কাচারী, ধর্মীয় উৎসবের জন্য বিভিন্ন উপাসনলয়, বিনোদনের জন্য নাচমহল, নাগমহল, অন্দরমহল ও অন্ধকূপ ইত্যাদি স্থাপন করেছিলেন।জগেন্দ্র নারায়ণ রায়ের সমাপ্তকৃত রাজবাড়ির দ্বিতল ভবনে লতাপাতার বিভিন্ন নকশা এবং পূর্ব দেয়ালের উপরে রাজর্ষি জগেন্দ্র নারায়ণের চৌদ্দটি আবক্ষ মূর্তি আছে তাছাড়া ভবনটির পূর্বপাশে একটি শিব মন্দির এবং মন্দিরের সামনে নাট মন্দির রয়েছে রাজবাড়িতে  একটি বিশাল পাঠাগার ছিলো যেটি কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে রাজবাড়িটির যে সিংহদরজা ছিল তাও নিশ্চিহ্ন হয়েছে

১৯০০ সালের দিকে ঘনশ্যামের বংশধররা বিভক্ত হলে হরিপুর রাজবাড়িও দুটি আলাদা অংশে বিভক্ত হয়ে যায় রাঘবেন্দ্র-জগেন্দ্র নারায়ণ রায় যে বাড়িটি তৈরি করেন তা বড় তরফের রাজবাড়ি নামে পরিচিত এই রাজবাড়ির পশ্চিমদিকে নগেন্দ্র বিহারী রায় চৌধুরি গিরিজা বল্লভ রায় চৌধুরি ১৯০৩ সালে আরেকটি রাজবাড়ি নির্মাণ করেন যার নাম ছোট তরফের রাজবাড়ি

জরাজীর্ন অবস্থায় পড়ে আছে এখন এই হরিপুর রাজবাড়িটি। সরকার সংস্কারের উদ্যোগ নিলে এই রাজবাড়িটি হতে পারে পর্যটনের একটি অন্যতম স্থান। হরিপুরবাসীর প্রত্যাশা অতিসত্যর এটিকে সংস্কার করে গড়ে তোলা হবে একটি পর্যটন স্থান হিসেবে।

শনিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের প্ল্যাটফর্মস বা চ্যানেলগুলো কি কি?

ট্রেডিশনাল মার্কেটিংয়ে অনেক সময় দেখি কোম্পানিগুলো কিছু স্পট বেছে নেয় তারপর সেই স্পটগুলিতে মার্কেটিং রিপ্রেজেন্টেটিভ বা বিপনন কর্মকর্তার মাধ্যমে মার্কেটিং করে থাকে।
ডিজিটাল মার্কেটিং যেহেতু অনলাইন নির্ভর সে ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই অনলাইনভিত্তিক বা ইন্টারনেটভিত্তিক কিছু প্ল্যাটফর্ম বা চ্যানেল বেছে নিতে হবে। বিশেষত যারা আউটসোর্স করেন বা কন্টেন্ট মার্কেটিং করেন তাদের তো ইন্টারনেটভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ছাড়া আর কোন জায়গা নেই। তো চলুন দেখে আসা যাক প্ল্যাটফর্মগুলো কি কি!

ওয়েবসাইট বা ব্লগ   হচ্ছে আপনার বা আপনার কোম্পানির একটা ইউনিক আইডেন্টিটি। আজকাল আপনি একটি কোম্পানি করবেন অথবা আপনার পণ্য বা সেবা বিপনন করবেন কিন্তু ওয়েবসাইট না থাকলে কি হয়! অথবা আপনি কন্টেন্ট মার্কেটিং করে গুগল এডসেন্স থেকে টাকা উপার্জন করতে চাইছেন তাহলে তো অবশ্যই আপনার একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগ থাকা জরুরি! বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর এই যুগে ওয়েবসাইট বা ব্লগ হচ্ছে একটি বিশ্বস্থতার প্রতীক। আপনি আপনার ওয়েবসাইটে আপনার পণ্য বা সেবা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরবেন এতে করে কাস্টমাররা সহজেই আপনার পণ্য বা সেবা সম্পর্কে জানতে পারবে। আর যদি কন্টেন্ট মার্কেটিং করেন তাহলে ভিউয়ারের চাহিদামত তথ্য উপস্থাপন করবেন। তবে অবশ্যই মনে রাখবেন গুগল বা সার্চইঞ্জিনে সার্চে প্রথমের দিকে আসতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগের সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা ইংরেজীতে সংক্ষেপে যাকে বলে SEO এর কাজ করাতে হবে।

ফেসবুক হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের অন্যতম এবং কার্যকরী একটি প্ল্যাটফর্ম বা চ্যানেল। বাংলাদেশে বর্তমান ফেসবুক ব্যাবহারকারীর সংখ্যা ৩ কোটির উপরে। ধারণা করা হচ্ছে টিভি বা অন্য কোন মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেওয়ার থেকে ফেসবুকে ডিজিটাল মার্কেটিং করাটা এখন অনেক কার্যকরী। বাংলাদেশে তো এখন অনেক মানুষ আছে যারা টিভি দেখার থেকে খবর বা যে কোন বিষয়ে জানতে ফেসবুকে ঢুকেন বা ফেসবুক ব্রাউজ করেন। অনেকে এখন পণ্য বা সেবা বিপনন করতে অথবা কন্টেন্ট মার্কেটিং করতে ফেসবুককেই একমাত্র মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন।

ইউটিউব হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্ট বা ভিডিও স্ট্রীমিং ওয়েবসাইট বা প্ল্যাটফর্ম। গুগলের পরেই মানুষ এখন কোন কিছু জানতে বা দেখতে ইউটিউবে সার্চ করে। আপনি আপনার পণ্য বা সেবা সম্পর্কে বিভিন্ন ধরণের ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে আপলোড করতে পারেন। এতে করে সহজেই মানুষ আপনার পণ্য বা সেবা সম্পর্কে ধারণা পাবে। যারা ইউটিউব থেকে টাকা উপার্জন করতে চান তারা বিভিন্ন ধরণের ভিডিও কন্টেন্ট বানিয়ে ইউটিউবে আপলোড করতে পারেন।

লিঙ্কডইন হচ্ছে মূলত প্রোফেশনালদের জন্য একটি সোস্যাল মিডিয়া। অনেকে আছেন যারা কর্পোরেটদের টার্গেট করে পণ্য বা সেবা বিপনন করেন তারা লিঙ্কডইনকে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বেছে নিতে পারেন। অথবা যারা কর্পোরেটদের টার্গেট করে কন্টেন্ট মার্কেটিং করে থাকেন তারাও লিঙ্কডইনকে মাধ্যম হিসেবে নিতে পারেন।

ইনস্টাগ্রাম হচ্ছে ফেসবুকেরই মালিকানাধীণ ইমেজ বা ছবি শেয়ারিং সোস্যাল মিডিয়া। অনেকেই আছেন যারা বিভিন্ন পণ্য বা সেবা নিয়ে ফটোগ্রাফি করে থাকেন অথবা ইমেজ কন্টেন্ট নিয়ে মার্কেটিং করেন (যেমন গ্রাফিক্স, মূলত ফটোশপ) তাদের জন্য  ইনস্টাগ্রাম হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটা পার্ফেক্ট মাধ্যম।

টুইটার এরও কিছু সংখ্যক ব্যাবহারকারী বাংলাদেশে আছে। টুইটারেও নিয়মিত পোস্ট বা মার্কেটিং করলে একটা সময় ভাল ফলোয়ার সমৃদ্ধ একটা প্রোফাইল হলে সেটিও হতে পারে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের একটা অন্যতম প্ল্যাটফর্ম। মূলত যারা গ্লোবালি বিজনেস করেন অথবা কন্টেন্ট মার্কেটিং করেন তাদের জন্য ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ভাল একটা প্ল্যাটফর্ম টুইটার

এছাড়াও Reddit, Tumblr এর মত প্ল্যাটফর্মগুলো ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের জন্য খুবই কার্যকরী। 

মঙ্গলবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং কেন?

প্রযুক্তির অগ্রযাত্রার সাথে সাথে পরিবর্তন হচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রা। আর এর সাথে পরিবর্তন হচ্ছে আমাদের জীবনের প্রাত্যহিক সব কাজকর্মের রীতি-নীতি। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের জীবনধারা ও জীবনযাপন নির্ভর করে আসছিল মূলত কৃষির উপরে। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে সেটা হয়ে যায় ব্যাবসাকেন্দ্রিক। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে প্রতিটি ক্ষণে এখন কোন না কোন ভাবে আমরা ব্যাবসাকেন্দ্রিক কোন কাজের সাথে জড়িত হচ্ছি। সেভ করার ব্লেড থেকে শুরু করে জীবন ধারণের অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি হয় কেউ কিনছি অথবা কেউ বিক্রি করছি। 

আমরা যখন আমাদের ব্যাবসার পণ্য বা কোন সেবার জন্য ক্রেতা খুজি তখনেই আমাদের সামনে চলে আসে বিপনন বা মার্কেটিংয়ের বিষয়টি। বিপননের চিরাচরিত কৌশলগুলো  আমরা মোটামুটি সবাই জানি। পণ্য বা সেবার বিক্রির জন্য বা প্রসারের জন্য আমরা মার্কেটিং রিপ্রেজেন্টেটিভ নিয়োগ করে থাকি অথবা বিভিন্ন টিভি, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বা বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকি। 

কিন্তু ডিজিটাল এই যুগে এই কৌশলটিও এখন ডিজিটাল হয়ে গেছে। প্রযুক্তির এই যুগে মার্কেটিং বা বিপননের মাধ্যম হয়ে উঠেছে এখন অনলাইন বা ইন্টারনেট নির্ভর। আর এটাকেই আমরা বলছি ডিজিটাল মার্কেটিং। শুধু পণ্য বা সেবার বিপননের জন্য নয় এই ইন্টারনেটের যুগে যারা এখন আউটসোর্সিং করতে চান, পারসোনাল ব্র্যান্ডিং করতে চান বা নিজের ওয়েবসাইটে অথবা ব্লগে ট্রাফিক বাড়িয়ে বা ভিউয়ার বাড়িয়ে গুগল এডসেন্স বা এফিলিয়েটের মাধ্যমে টাকা উপার্জন করতে চান তাদের জন্যও ডিজিটাল মার্কেটিং জানাটা জরুরি। 

ডিজিটাল মার্কেটিং আসলে কি? যদি এই প্রশ্নে যাই তাহলে এর উত্তরটা একেবারে সোজাসাপটা হচ্ছে- অনলাইন বা  ইন্টারনেটভিত্তিক যে মাধ্যমগুলো আছে মূলত ওয়েবসাইট বা ব্লগ এবং বিভিন্ন সোসিয়াল মিডিয়া যেমন ফেসবুক, টুইটার, লিঙ্কডইন, ইউটিউবের মত মাধ্যমগুলোকে ব্যাবহার করে বিপনন বা মার্কেটিং। এই কৌশলে আপনি আপনার বিভিন্ন পণ্য বা সেবা এবং কন্টেন্টও মার্কেটিং করতে পারেন। ( ওয়েবসাইট বা ব্লগের বিভিন্ন লেখা,ছবি, ভিডিওকে মূলত কন্টেন্ট বলা হয়ে থাকে)। শুধু টাকার বিনিময়ে বিজ্ঞাপন না দিয়ে আপনি অর্গানিক বা ন্যাচারালি আপনি মার্কেটিং করতে পারেন। 

ডিজিটাল এই যুগে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের প্রয়োজনীয়তাটা খুব যে বুঝিয়ে বলার আর দরকার আছে বলে মনে হয়না। বাংলাদেশে বর্তমান ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ৬ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যাবহার করছেন। এবং এই ৬ কোটি মানুষ কোন না কোনভাবে আপনার কাস্টমার অথবা আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগের ভিউয়ার। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আপনি আপনার অফিসে বা ঘরে বসেই  এই ৬ কোটি মানুষের কাছে আপনার পণ্য বা সেবার তথ্য পৌছাতে পারছেন কিংবা আপনার কন্টেন্ট পৌঁছাতে পারছেন। আর জন্য আপনাকে আলাদা কোন রিপ্রেজেন্টেটিভ নিয়োগ দেওয়ার প্রয়োজন পরছেনা।