শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৯

পাখির খামারে বেকারত্ব দূর !



প্রথাগত হাস-মুরগির খামারের পাশাপাশি গড়ে উঠছে এখন পাখির খামার। দেশে যখন কর্মসংস্থানের অভাব তখন তরুণ উদ্যোমীরা বেছে নিচ্ছে এই ব্যাতিক্রমী পেশা। 

তেমনই একজন তুহিন পারভেজ সুজন। ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার এই তরুণ স্বল্প পরিসরে গড়ে তুলেছেন  পাখির খামার। শখের বসে শুরু করলেও এটি এখন বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনা করেন তিনি। 



খামারে তিনি প্রতিপালন করছেন কোয়েল পাখি। কয়েল পাখি প্রচুর পরিমানে ডিম দিয়ে থাকে। তাছাড়াও এই পাখির ডিম ও মাংসের প্রচুর চাহিদা আছে বাজারে। বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়ায় এই পাখিটি ঝামেলাহীন ভাবেই প্রতিপালন করা যায়।

লাভ বার্ড। দেখতে সুন্দর এই পাখিটি মূলত অনেকেই শখের বসে পোষে থাকেন । তবে বাজারে লাভ বার্ডের প্রচুর দাম ও চাহিদা আছে। দেশি ও বিদেশি কয়েকটি প্রজাতির লাভ বার্ড প্রতিপালন করছেন তুহিন পারভেজ। বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়ায় এই পাখিটিও প্রতিপালন করা যায়।

ঘুঘু। দেশিয় এই পাখিটিও এখন খামারে প্রতিপালন হচ্ছে। প্রচুর পরিমানে ডিম ও মাংস উৎপাদনে যেমনি ঘুঘুর আছে অনেক সক্ষমতা তেমনি বাজারে এর চাহিদাও আছে প্রচুর। 

কবুতর। যদিও অনেকে এই পাখিটি শখের বসে প্রতিপালন করে থাকেন তবে এখন এটি বাণিজ্যিকভাবেও প্রতিপালন হচ্ছে। কবুতরের রয়েছে বিভিন্ন প্রকার দেশি ও বিদেশি জাত এবং এই পাখিটিও প্রচুর পরিমানে ডিম ও মাংস প্রদানে সক্ষম।

এসব পাখি প্রতিপালনের পাশাপাশি তুহিন পারভেজ করছেন টার্কি মুরগি, রাজহাঁস ও পাতিহাঁস  প্রতিপালন। 

শখের বসে করেন টিয়া ও খরগোশ প্রতিপালন। সবসময় আপন মমতায় আগলে রাখেন প্রাণীগুলোকে। 

এসব পাখি প্রতিপালনে পাখির বাসস্থান হিসেবে তুহিন পারভেজ ব্যাবহার করছেন  দেশিয় তারের তৈরী নেট, তারের খাঁচা, বাঁশ, মাটি ও কাঠের তৈরি বিভিন্ন উপকরণ। 

খাবার হিসেবে দেশিয় বাজারে প্রাপ্ত বিভিন্ন ধরণের ফিড খাওয়ান এসব পাখিদের। 

বেকারত্ব দূরীকরণে পাখির খামার হয়ে উঠতে পারে অন্যতম আয়ের উৎস। তবে খেয়াল রাখতে হবে এতে করে যেন জীববৈচিত্রের কোন প্রকার ক্ষতি না হয়। 















রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৯

মাওলানা ভাসানী, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা!

মাওলানা ভাসানী
মাওলানা ভাসানী 
স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, হ্যা তিনিই ছিলেন প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা। গরীব মেহনতি ও নির্যাতিত মানুষের জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। 

মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধানগড়া পল্লীতে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা হাজী শারাফত আলী। হাজী শারাফত আলী ও বেগম শারাফত আলীর পরিবারে ৪ টি সন্তানের জন্ম হয়। একটি মেয়ে ও তিনটি ছেলে। মোঃ আব্দুল হামিদ খান সবার ছোট। তার ডাক নাম ছিল চেগা মিয়া। ছেলে-মেয়ে বেশ ছোট থাকা অবস্থায় হাজী শারাফত আলী মারা যান। কিছুদিন পর এক মহামারীতে বেগম শারাফত ও দুই ছেলে মারা যায়। বেঁচে থাকেন ছোট শিশু আব্দুল হামিদ খান।

পিতৃহীন হামিদ প্রথমে কিছুদিন চাচা ইব্রাহিমের আশ্রয়ে থাকেন। ওই সময় ইরাকের এক আলেম ও ধর্ম প্রচারক নাসির উদ্দীন বোগদাদী সিরাজগঞ্জে আসেন। হামিদ তার আশ্রয়ে কিছুদিন কাটান।

মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী যৌবনের শুরুতেই গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চিরদিনের জন্য গৃহত্যাগ করেন।

তিনি ছিলেন বিংশশতকী ব্রিটিশ ভারতের অন্যতম তৃণমূল রাজনীতিবিদ ও গণআন্দোলনের নায়ক, যিনি জীবদ্দশায় ১৯৪৭-এ সৃষ্ট পাকিস্তান ও ১৯৭১-এ প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

১৯২৯-এ আসামের ধুবড়ী জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাসান চরে প্রথম কৃষক সম্মেলন আয়োজন করেন। এখান থেকে তার নাম রাখা হয় "ভাসানীর মাওলানা"।

তিনি সূফী এবং তাসাউফের সাধনা শেষে দেওবন্দ থেকে রবুবিয়াতের রাজনৈতিক দর্শনের শিক্ষা নিয়ে ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট গঠনকারী প্রধান নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম।

তিনি ছিলেন একজন দূরদর্শী নেতা এবং পঞ্চাশের দশকেই নিশ্চিত হয়েছিলেন যে পাকিস্তানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ একটি অচল রাষ্ট্রকাঠামো। ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের কাগমারী সম্মেলনে তিনি পাকিস্তানের পশ্চিমা শাসকদের 'ওয়ালাকুমুসসালাম' বলে সর্বপ্রথম পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতার ঐতিহাসিক ঘণ্টা বাজিয়েছিলেন।

অথচ আওয়ামী লীগের এই প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিকে স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন গৃহবন্দি করে রাখা হয়। ১৯৭২ সালের ৯ই এপ্রিল ঢাকার পল্টন ময়দানে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জনসভায় তিনি ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেন। ভারতীয় আগ্রাসন ও আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেন। দেশব্যাপী দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে ১৯৭৪ সালে ভাসানীর ভুখা মিছিল বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে।

১৯৭৬ সালে ফারাক্কা অভিমুখে ঐতিহাসিক লংমার্চের নেতৃত্ব দিয়ে তিনি ভারতের সেবাদাসদের চক্ষুশূলে পরিনত হন। আর একারনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা হয়েও আওয়ামী লীগের কাছ থেকে প্রাপ্য সম্মানটুকু পাননি। আওয়ামী লীগের কাছে তিনি কেবলই আজ এক বিস্মৃতির নাম।

১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই দেশ বরেণ্য নেতা মৃত্যুবরণ করেন। তাকে টাংগাইল জেলার সদর উপজেলার উত্তর-পশ্চিমে সন্তোষ নামক স্থানে পীর শাহজামান দীঘির পাশে সমাধিস্থ করা হয়। সারা দেশ থেকে আগত হাজার হাজার মানুষ তার জানাযায় অংশগ্রহণ করে।

রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

ব্যাঙ কেন সাপ খায়?

                                                               ব্যাঙ যখন সাপ খায় 

প্রকৃতি , পরিবেশ ও প্রাণীবৈচিত্র একটি বাস্তুসংস্থানের নিয়ম দ্বারা পরিচালিত। প্রাণীকূলের খাদ্যাভাসও এই বাস্তুসংস্থানের নিয়ম দ্বারা পরিচালিত হয়। প্রাণীজগতে অপেক্ষাকৃত ছোট প্রাণীরা হচ্ছে বড় প্রাণীগুলোর খাবার। যেমন  লতাপাতা হরিণের খাবার আবার হরিণ বাঘের খাবার। এভাবেই একটি রিসাইকেল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পৃথিবী ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা হয়ে আসছে। 

কিন্তু মানব কতৃক পরিবেশ দুষণ ও বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কারণে প্রকৃতির ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে দেখা দিচ্ছে খাদ্যাভাবের। বিরুপ আকার ধারণ করছে প্রকৃতি। 

প্রকৃতির বিরুপ প্রতিক্রিয়ার কারণে দেখা দিচ্ছে খাদ্যাভাবের, আর এই খাদ্যাভাবের কারণে প্রাণীকূলে দেখা দিচ্ছে খাদ্যাভাসের অদ্ভুত পরিবর্তন। জীববিজ্ঞানীরা এই রকম বিপরীত খাদ্যাভ্যাসকে পৃথিবীর প্রকৃতি ও মানবজাতির জন্য অশনিসংকেত হিসেবে দেখছেন!

ব্যাঙ হচ্ছে সাপের খাবার কিন্তু দেখা যাচ্ছে ঘটছে উল্টো ! খোদ সাপেই পরিণিত হচ্ছে ব্যাঙের খাবারে।

সাপুড়ে তোঁতা মিয়ার মৃত্যুর আগে সাপ ছোবল দেওয়ার দৃশ্য

                                             তোঁতা মিয়াকে সাপ ছোবল দেওয়ার দৃশ্য


সাপুড়ে তোঁতা মিয়ার বাড়ি ছিল ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার চৌরঙ্গী বাজারে। বাংলাদেশে তিনিই প্রথম সাপের খামার করেছিলেন। বিভিন্ন ধরণের সাপের সংগ্রহ ছিল তার কাছে। প্রাকৃতিকভাবে সাপের প্রজনন ঘটিয়ে সাপের বাচ্চা উৎপাদন করতেন। সেই সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় বেশ কয়েকবার শিরোণাম হয়েছিল তার এই সাপের খামারের খবর। খামারটি এক পলক দেখার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক মানুষ ছুটে আসতেন। দেশের বাইরে থেকেও আসতেন অনেক পর্যটক। তার এই সাপের খামারটি হয়েছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের গবেষণার বিষয়বস্তু।

২০০৭ সালে তারই পালিত এক সাপ ছোবল দিলে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিষক্রিয়া নিষ্ক্রিয় না হওয়ায় দুদিন পর তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেন।

তার মৃত্যুর পর সাপ সহ কয়েক হাজার সাপের বাচ্চা মারা যায়, কিছু সাপ ঢাকা চিড়িয়াখানায় স্থানান্তরিত করা হয় ও কিছু সাপ চট্টগ্রাম ভার্সিটির প্রাণীবিদ্যা বিভাগ নিয়ে যায়।

সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

বাঁশের বাঁশির ইতিহাস ও আদ্যোপান্ত

                                                                        বাঁশের বাঁশি 


বাঁশি এক ধরনের সুষির অর্থাৎ ফুৎকার (ফুঁ) দিয়ে বাজানো যায় এমন বাদ্যযন্ত্র । বাংলায় বাঁশিকে মুরালি, মোহন বাঁশি, বংশী অথবা বাঁশরিও বলা হয় । বাঁশির পাশ্চাত্য সংস্করনের নাম ফ্লুট (flute) 

অ্যাড্রাল পাওয়েলের মত অনুসারে, অনেক প্রাচীন সংস্কৃতিতে বাঁশির মতো সরল যন্ত্রের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। লোকমত এবং পুরাতত্ত্বের দিক থেকে বিচার করলে বাঁশির তিনটি জন্মস্থান চিহ্নিত করা যায়: মিশর, গ্রিস ও ভারত। আড়াআড়ি বাঁশি এই তিনটে জায়গাতেই পাওয়া গেলেও পাশাপাশি বাজানোর (অনুদৈর্ঘ্য) বাঁশি একমাত্র প্রাচীন ভারতেরই অবদান। পাওয়েলের ধারণা, মধ্যযুগের পর থেকে ভারতীয় বাঁশির গঠনে তেমন কোনো বিবর্তন হয়নি। তাছাড়া ভারতীয় বাঁশি থেকে সামান্য আলাদা নকশার বাঁশি দেখা যায় চীনে, সেই ভিত্তিতে বলাই যায়, প্রথম বাঁশির জন্ম ভারতেও হয়নি, চীনেও হয়নি। সম্ভবত এর জন্ম হয়েছিল আরো অনেক আগে, মধ্য এশিয়ায়।

মধ্যযুগের ভারতীয় বাঁশি অন্যান্য সংস্কৃতিতে বেশ প্রভাব বিস্তার করেছিল। মধ্যযুগীয় ইউরোপীয় শিল্পকলায় বাঁশির প্রভাব এতটা বেড়েছিল যে, লুসার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের ছাত্র লিয়েন এলিচের মত ছিল, বাঁশি ১০ম শতাব্দীতে ভারত থেকে বাইজান্টিয়াম সাম্রাজ্যে পৌঁছায় এবং ভারতের মতোই ইউরোপেও জনপ্রিয়তা লাভ করে।
সংগীত-ইতিহাসবিদ ব্রুনো লক্ষ করেছেন, ভারতের সমস্ত প্রাচীন পুরাতাত্ত্বিক ভাস্কর্য ও চিত্রকলায় বাঁশিকে অনুভূমিকভাবে (একটু নিচু করে) বাজানোর রীতি পাওয়া যায়। সঙ্গে এটাও লক্ষণীয় যে, সেকালে বাদ্যযন্ত্র বাজানোতে কোনো লিঙ্গভেদ ছিল না নিদর্শনগুলোতে প্রচুর নারীশিল্পীর ছবিও পাওয়া গেছে। কিন্তু পঞ্চদশ শতাব্দী শুরু হতেই বাঁশি বাজানোর অধিকার ক্রমে ক্রমে পুরুষদের দখলে চলে যায় আর বাজানোতে আড়াআড়ি পদ্ধতির শুরু হয়। সম্ভবত ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের আগমন ও হিন্দুস্তানি সংগীতের উপর পশ্চিম এশীয় প্রভাব এই পরিবর্তনের জন্য দায়ী ব্রুনো ব্যাখ্যা করেছেন।

শিল্প ও সংগীত বিষয়ক সংস্কৃত গ্রন্থ নাট্যশাস্ত্রে (~২০০ খ্রিঃপূঃ থেকে ২০০ খ্রিস্টাব্দ) উল্লিখিত হয়েছে, বাঁশি সে সময়ের এক গুরুত্বপূর্ণ বাদ্যযন্ত্র ছিল। অনেক হিন্দুগ্রন্থে বাঁশি বা বেণুকে সংগীতকলায় ব্যবহার করার জন্য মানুষের গলার স্বর ও বীণার পরিপূরক হিসেবে দেখানো হয়েছে (বাণী-বীণা-বেণু)। ঋগ্বেদের(১৫০০-১২০০ খ্রিঃপূঃ) মতো প্রাক্‌বৈদিক ও বৈদিক গ্রন্থে একে নাদী আর তূণব এবং পরবর্তী বৈদিক যুগের হিন্দু গ্রন্থে বাঁশিকে বেণু বলা হয়েছে। উপনিষদ যোগেও এর উল্লেখ আছে।

বংশী জাতীয় যন্ত্রকে অনেক প্রাচীন হিন্দু[, বৌদ্ধ ও জৈন মন্দিরের চিত্র ও ভাস্কর্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। হিন্দু দেবতা কৃষ্ণের চিত্রায়ণে বাঁশি একটি অপরিহার্য অঙ্গ। কৃষ্ণ  রাধার প্রেম কাহিনির সাথে বাঁশি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বংশী কৃষ্ণের পবিত্র অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী বাদ্যযন্ত্র হিসেবেও খ্যাত। 

বাঁশি তৈরিতে লাগে বিশেষ ধরনের মুলিবাঁশ।বাঁশটির পুরুত্ত পাতলা হলে সুন্দর মিষ্টি আর নিখুত সুর আসবে। বাঁশ রোদে শুকিয়ে বাঁশি অনুসারে মাপমতো কেটে টুকরো করা হয়। এরপর টুকরোগুলো মসৃণ করে নিতে হয়। পরে কয়লার আগুনে পোড়ানো লোহার শলাকা দিয়ে ছিদ্র করা হয়। আঁকা হয় নকশা। এরপর মাটির প্রলেপ লাগিয়ে আবার আগুনে সেঁকে জলেতে ধুয়ে বাঁশিগুলো পুনরায় রোদে শুকানো হয়। শুকানোর পর বার্নিশ করা হয়। এরপর বাঁশিতে ফুঁ—সুর উঠল কিনা। 

তবে বর্তমানে আধুনিক উপায়ে হাতির দাঁত, ফাইবার গ্লাস আর নানা ধাতু দিয়েও বাঁশি তৈরি করা হচ্ছে।  বাঁশির দৈর্ঘ্য সাধারণত ৩০ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি) থেকে ৭৫ সেন্টিমিটারের (৩০ ইঞ্চি) মধ্যে হয়, আর এর পরিধি হয় মানুষের বুড়ো আঙুলের সমান।

বাঁশি সাধারণত তিন প্রকারের হয়ে থাকেঃ
  1. সরল বাঁশি
  2. আড় বাঁশি
  3. টিপরাই বাঁশি

বাঁশি নানান রকম স্কেলের হয়। যেমন ছয়, সাড়ে ছয়,সাত, সাড়ে সাত, আট, সাড়ে আট, নয়, সাড়ে নয়, এগারো, সাড়ে এগারো ইত্যাদি। এই স্কেল গোল বাঁশির বাঁশের দৈর্ঘ্য, ব্যাস, ছিদ্রের অবস্থান প্রভৃতির উপর নির্ভর করে ।
বাঁশির নম্বর
বাঁশির স্কেল
৮ ১/২ (সাড়ে আট)
C# (সি শার্প)
C ( সি )
B ( বি )
৬ ১/২ (সাড়ে ছয়)
A# (এ শার্প)
A ( এ )
৫ ১/২ (সাড়ে পাঁচ)
G# (জি শার্প)
G ( জি )


বাঁশিতে সংগীতের সাতটি স্বর (সা রে গা মা পা ধা নি) এবং পাঁচটি বিকৃত স্বর ( ঋ জ্ঞ ক্ষ দ ণ), সর্বমোট ১২ টি স্বরই পাওয়া যায় ।

বাঁশিতে সুর পরিবর্তন (টিউনিং) করা যায় না, তাই একজন বংশীবাদক কে ১২ টি স্কেলের ১২টি বাঁশিই সাথে রাখতে হয়।


বাঁশিতে
  • -উদারা সপ্তক এর পা ধা নি
  • -মুদারা সপ্তক এর সবগুলো স্বর
  • -তারা সপ্তক এর সা রা গা মা পা পাওয়া যায়
পা্‌ ধা্‌ নি্‌ সা রে গা মা পা ধা নি র্সা র্রে র্গা র্মা র্পা



শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৯

শালবন বৌদ্ধ বিহার, মাটির নিচের সভ্যতা

শালবন বৌদ্ধ বিহার

শালবন বৌদ্ধ বিহার, বাংলাদেশের প্রাচীন নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম। কুমিল্লা জেলার ময়নামতি কোটবাড়িতে লালমাই পাহাড়ের মাঝামাঝি এলাকায় এই প্রাচীন স্থাপত্যটির অবস্থান। 

পূর্বে এই প্রত্নকেন্দ্রটি শালবন "রাজবাড়ি" নামে পরিচিত ছিল। প্রত্নতাত্বিক খননে বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষ উন্মোচিত হওয়ায় একে "শালবন বিহার" নামে আখ্যায়িত করা হয়। তবে এর আসল নাম "ভবদেব বিহার" । খ্রিস্টীয় সাত শতকের মধ্যভাগ হতে আট শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত দেব বংশের শাসকগণ এই অঞ্চল শাসন করেন। উক্ত বংশের চতুর্থ রাজা ভবদেব এই মহাবিহার নির্মাণ করেন। 

বিহারটির মূল ফটকটি ছিল উত্তরপার্শ্বে। মূল ফটকের দুই স্তম্ভে বিভিন্ন প্রকার পশু-প্রাণীর নকশাকৃতি রয়েছে। 

বর্গাকার বিহারটির প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ ৫৫০ ফুট করে। 

চার বাহুতে সর্বমোট ১১৫টি সন্যাসকক্ষ ছিল। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা এসব সন্যাস কক্ষেই থাকতেন। 

উত্তর বাহুর মধ্যবর্তী বিশালাকার তোরণ এই বিহাড়টির বিশেষ আকর্ষণ। বর্তমানে এই তোরণের সামনে বিহারের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছে প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর। 

মূল মন্দিরটি মধ্যভাগে অবস্থিত। কেন্দ্রীয় মন্দিরটিতে ৬টি ও পুরো বিহারটিতে ৪টি নির্মানযুগের প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রথম ও দ্বিতীয় নির্মানযুগের ধ্বংসাবশেষ তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম নির্মানযুগের ধ্বংসাবশেষের নীচে ঢাকা পরেছে। ষষ্ঠ নির্মাণযুগের নির্মিত মন্দির কাঠামোর উপরিভাগের স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট কালের বিবর্তে অপসারিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্দিরটি তৃতীয় নির্মানযুগে ক্রুশোকৃতি রূপ ধারণ করে এবং ঐ সময়েই চতুর্দিকসহ বিহার দ্বারা বেষ্টিত হয়ে বিশাল প্রতিষ্ঠানে পরিনিত হয়। 

মূল মন্দিরের চারপাশে ছোট ছোট ১২টি মন্দির ও ৮টি স্তুপা উন্মোচিত হয়েছে। 

সাম্প্রতিককালে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগ, কুমিল্লা কতৃক শালবন বিহারের প্রত্নতাত্বিক খনন সম্পাদন করা হয়। খননের ফলে বিহারের মূল ফটকের পূর্বপাশে একটি প্রাচীন কূপের কাঠামো উন্মোচিত হয়। ধারণা করা হয় সেই সময়কার বৌদ্ধ শাসকশ্রেণী ও ভিক্ষুকগণ এই কূপ থেকে পানি আহরোণের মাধ্যমে যাবতীয় প্রয়োজন পূরণ করত। কূপের খননকাল আনুমানিক সাত হতে আট শতক। 

বিহারটির আশেপাশে এক সময় শালগজারির ঘন বন ছিল বলে এই বিহারটির নামকরণ হয়েছিল শালবন বিহার। এখন শুধু ছোট একটি শালবন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বিহারটির পশ্চিম পার্শ্বে। 

এই বিহারটি একাধারে একটি মন্দির, প্রশাসনিক কেন্দ্র এবং মধ্যযুগের একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সমন্বিতভাবে ব্যাবহৃত হয়েছে। নিকটবর্তী আনন্দ বিহার ও এর কেন্দ্রীয় মন্দির সম্ভবত এই বিহারের পূর্ব দৃষ্টান্ত। 

মন্দির এবং মন্দির পার্শবর্তী অঞ্চলে কয়েক দফা প্রত্নতাত্বিক  খননের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের পোড়ামাটির ফলক, ব্রোঞ্চের মূর্তি, নকশাকৃত ইট ও মূদ্রাসহ বিভিন্ন মূল্যবান প্রত্নবস্তু পাওয়া গেছে। যা বর্তমানে বিহারের সামনে ময়নামতি যাদুঘরে সঞ্চিত ও প্রদর্শিত আছে। 

এখানে আবিষ্কৃত প্রত্নসম্পদ ষষ্ঠ হতে দ্বাদশ শতাব্দীর প্রাচীন বঙ্গ, সমতটেরই অতীত স্মৃতি বহন করে। 

শনিবার, ৩ আগস্ট, ২০১৯

হোম স্ক্রিনে গুগলের প্রতিযোগি সার্চ ইঞ্জিনগুলোও জায়গা পাচ্ছে এন্ড্রোয়িডে

গুগল এন্ড্রোয়িড
বেশ কয়েকবার বিভিন্ন কারণে  ইউরোপীয় ইউনিয়নের জরিমানার মুখে পড়তে হয়েছে গুগলকে! ঘাড়ে পরেছে ডাটা চুরির অপবাদও। সর্বশেষ ৪.৩ বিলিয়ন ইউরো ইউরোপীয় ইউনিয়নকে জরিমানা দিয়েছে গুগল।  তাই এবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউরোপের দেশগুলোর গ্রাহকদের কাছে গুগলের এন্ড্রোয়িডের নতুন ভার্সনে থাকছে একটি চমক! ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে গুগলের পাশাপাশি আরো কিছু সার্চ ইঞ্জিনকে ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে বেছে নিতে পারবেন গ্রাহকরা। এমনটাই জানিয়েছে গুগলের মূল কোম্পানি আলফাবেট। 

তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই বড় ইকোনোমিক জোনে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন ইচ্ছা করলেই আবার পছন্দকৃত সার্চ ইঞ্জিনগুলোর মধ্যে আসতে পারবেনা। এর জন্য একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করবে গুগল। 

হোম স্কিনের পছন্দের লিস্টে মোট চারটি সার্চ ইঞ্জিন লিস্ট পাবে গ্রাহকরা আর এই চারটির মধ্যে তিনটি সার্চ ইঞ্জিনকে গুগল বাছাই করবে নিলামের মাধ্যমে । চারটির মধ্যে গুগলও থাকবে তবে এর জন্য গুগলকে নিজে নিলামে উঠতে হবেনা। 
এভাবে থাকবে সার্চ ইঞ্জিন লিস্ট
২০২০ সালের শুরু থেকেই গুগল এন্ড্রোয়িডের ডিভাইসগুলোর হোম স্ক্রিনে  এই সেবা চালু করবে এবং এই সেবা শুধুমাত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইকোনোমিক জোনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। 

তবে চারটির মধ্যে কেউ কোন নির্দিষ্ট অর্ডারে থাকবেনা। এই চারটি সার্চ ইঞ্জিনের মধ্যে সময়ে সময়ে অর্ডার পরিবর্তন হবে। 

নিলাম জয়ী তিনটির মধ্যে যদি কোন খারাপ  সার্চ ইঞ্জিন বা মার্কেটে র‍্যাংক নেই এমন কোন  সার্চ ইঞ্জিন যদি নিলামে জেতে তাহলে গ্রাহকদের জন্য সেটা একটু ভোগান্তির বিষয় বা জোর করে গিলানোর মত কাজ হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জার্মান ভিত্তিক সার্চ ইঞ্জিন ক্লিকজের সিইও ড. মার্ক আল -হেমস। 

বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৯

সীমান্তের মিলনমেলা | বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত




ঠাকুরগাঁও জেলা সদর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে হরিপুর উপজেলা। এই উপজেলার পশ্চিমেই উত্তর-দক্ষিণ বরাবর বয়ে চলেছে ছোট নদী নাগর।মূলত এই নদীটিই এখানে দুই দেশকে বিভক্ত করেছে। ১৯৪৭ সালে দুটি দেশ বিভক্ত হয়ে গেলেও সীমান্তের কাঁটা তারের বেড়া  দুই দেশের মানুষের আত্মীয়তার বন্ধন বিভক্ত করতে পারেনি। তাই প্রতি বছর পহেলা বৈশাখ এলেই সীমান্তে বসে দুই দেশের মানুষের মিলনমেলা। 
(উপরের ভিডিওটিতে দেখুন বিস্তারিত)  

রবিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৯

বাঙ্গালির পহেলা বৈশাখ ও কৃষকের আত্মহত্যা

পহেলা বৈশাখ উদযাপন


পহেলা বৈশাখ বাঙ্গালির সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে। এবং এটি এখন বাংলা সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ। বৈশাখের এই উদযাপনকে বর্তমানে অনেকেই তুলনা করছেন ব্রাজিলের বিখ্যাত উৎসব "কার্নিভাল" এর সাথে।
স্বভাবতই অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে পহেলা বৈশাখের এই উদযাপন শুরু হয়েছিল ঠিক কখন বা কিভাবে? আর কারাই বা এটা শুরু করেছেন?
অনেকেই হয়ত মনে করে থাকেন বাঙ্গালিরা প্রাচীনকাল থেকে আনন্দঘন দিন হিসেবে এই পহেলা বৈশাখের উদযাপন করে আসছেন! কিন্তু তা নয় এর পিছনে লুকিয়ে আছে কৃষক আত্মহত্যার করুণ ইতিহাস।
প্রথমে চলুন জেনে আসি বাংলা বর্ষের শুরুটা হল কিভাবে।
খ্রিস্টীয়, গ্রেগরিয় ও গ্রীক বর্ষপঞ্জির মতই ৫৯৩ খ্রিস্টাব্দে রাজা শশাঙ্ক ভারতবর্ষে প্রথম বাংলা বর্ষপঞ্জির শুরু করেন। তবে ৫৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ঠিক কত তারিখ থেকে বাংলা বর্ষ গণণা শুরু হয়েছিল এবং কি নামে চালু হয়েছিল সেটির সঠিক তথ্য কোথাও পাওয়া যায়নি।
তবে বাঙ্গালীর ঐতিহ্যের সাথে এই পহেলা বৈশাখ যুক্ত হয় মোগল সম্রাট আকবরের আমল থেকে। যদিও সম্রাট আকবর নিজে বাঙালি ছিলেন না। সম্রাটের আদেশ মতে রাজকীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফতেহউল্লাহ সিরাজি সৌর সন এবং আরবি হিজরী সনের উপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম বিনির্মাণ করেন। এবং এটি ছিল রাজা শশাংকেরই সেই বর্ষপঞ্জির সংস্করণ মাত্র। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মার্চ বা ১১ই মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় (৫ই নভেম্বর, ১৫৫৬) থেকে। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে "বঙ্গাব্দ" বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়।
সম্রাট আকবরের এই বর্ষপঞ্জি চালুর পিছনে লুকিয়ে আছে করুন ইতিহাসটি। মুলত সম্রাট আকবর দুইটি কারণে এই বাংলা বর্ষপঞ্জি চালু করেন।
প্রথমত, আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় (৫ই নভেম্বর, ১৫৫৬) দিনটিকে স্বরণীয় করে রাখতে, যার কারণে ৫ই নভেম্বর, ১৫৫৬ ইং থেকেই গণণা কার্যকর করা হয়।
দ্বিতীয়ত, কৃষকদের কাছ থেকে খাজনা আদায়ের বার্ষিক একটা দিন ধার্য, যার কারণে পঞ্জিকার শুরুটা করা হয়েছিল ফসলের মৌসুমিকালকে হিসেব করে এবং এর নাম দেওয়া হয়েছিল "ফসলি সন"। এবং কৃষকদের এই খাজনা দিতে হত পহেলা বৈশাখে।
পহেলা বৈশাখ আসন্ন হলেই কৃষকদের উপর খাজনা দেওয়ার খড়ংগ নেমে আসত। খাজনা দিতে না পারলে কৃষকদের উপর করা হত পাশবিক নির্যাতন।
আবার অনেক কৃষক মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করত। কিন্তু মহাজনরাও পহেলা বৈশাখের দিনটিতে হালখাতার দিন হিসেবে ধার্য করে রাখত।
খাজনা ও ঋণের আর্থিক দুশ্চিন্তায় পহেলা বৈশাখ এলেই অনেক কৃষক আত্মহত্যা করত। সম্রাট আকবর দিনটিকে আনন্দময় হিসেবে সাধারণ প্রজাদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করলেও আসলে বাঙ্গালিদের জন্য পহেলা বৈশাখ ছিল বেদনাময় এবং দূঃসহ একটি তারিখ।

শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৯

কন্টেন্ট মার্কেটিং কি?



ডিজিটাল মার্কেটিংকে সহজ ভাষায় বলা যায় ‘মার্কেটিং কন্টেন্ট ডিজিটালি’। আসলে ‘ডিজিটাল’ শব্দটা হচ্ছে মার্কেটিং এর একটা ধারণা, সহজ ভাষায় বললে একটা এপ্রোচ স্ট্র্যাটেজি। কিন্তু ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে আমরা আসলে কন্টেটেরই মার্কেটিং করছি। 

আজকাল মানুষ এড কম পছন্দ করে। অনেকেই তো ইন্টারনেট ব্রাউজারে এড ব্লকিং সফটওয়্যার দিয়ে এড ব্লক করে রাখেন। মানুষ যে এড কম পছন্দ করে তার একটা ছোট উদাহরণ হচ্ছে আমরা যখন টেলিভিশন দেখি যেই চ্যানেলে এড হয় সেই চ্যানেল পরিবর্তন করে অন্য চ্যানেলে চলে যায়।

তাহলে ইন্টারনেটে আপনার টার্গেটেড কাস্টমারকে কিভাবে আপনার পণ্য বা সেবা সম্পর্কে বুঝাবেন কিংবা আপনার ব্র্যান্ডকে কিভাবে পরিচিত করে তুলবেন অথবা কিভাবে আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগে টার্গেটেড ভিউয়ারদের নিয়ে আসবেন?

এর সহজ সমাধাণ হচ্ছে কন্টেন্ট মার্কেটিং। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কন্টেন্ট মার্কেটিং কি?
আপনি ডিজিটাল চ্যানেলগুলোতে এমনভাবে কন্টেন্ট উপস্থাপন করবেন যেখানে আপনি সরাসরি আপনার পণ্য বা সেবা কেনার কথা না বলে তথ্যভিত্তিক উপাত্ত তুলে ধরবেন যাতে করে অডিয়েন্সরা সেই কন্টেন্ট দেখে বা পড়ে আপনার পণ্য বা সেবা কিনতে আগ্রহী হয়। ইংরেজীতে বলা যায় to drive profitable customer action. মানে অডিয়েন্সরা কল টু একশনে যেতে উৎসাহিত হবেন। 

এখন এই কন্টেন্ট টেক্সটও হতে পারে, ইমেজও হতে পারে, অডিও হতে পারে কিংবা ভিডিও হতে পারে। কন্টেন্ট নিয়ে ইন্টারনেটে এই টেকনিকটাই হচ্ছে কন্টেন্ট মার্কেটিং।

বিশেষত যারা এফিলিয়েট এবং SEO করেন তাদের জন্য কন্টেন্ট মার্কেটিং বিষয়ে জানাটা জরুরি। কারণ গুগল বা যে কোন সার্চ ইঞ্জিন শুধুমাত্র কন্টেন্টকেই ক্রাউল করে।

ট্রডিশনাল মার্কেটিং থেকে এই কন্টেন্ট মার্কেটিংয়ের পার্থক্যটা হচ্ছে, ট্রেডিশনাল মার্কেটিংয়ে আপনি ডাইরেক্ট সেল করছেন আর কন্টেন্ট মার্কেটিংয়ে আপনি ইনডাইরেক্ট সেল করছেন। 
ট্রেডিশনাল মার্কেটিংয়ের ফলাফলটা ক্ষণস্থায়ী। তার মানে আপনি যখন শুধু টাকা দিয়ে এড দিবেন তখনই সেল হবে, এড শেষ তো সেলও শেষ। 

এদিক দিয়ে কন্টেন্ট মার্কেটিংয়ের স্ট্র্যাটেজিটা স্থায়ী। এখনকার একটা আর্টিকেল পড়ে পাঁচ বছর পরও একজন কেউ আপনার পণ্য বা সেবা কিনতে পারে। আর কন্টেন্ট মার্কেটিংটা একেবারে সাশ্রয়ী, বেশিরভাগ ডিজিটাল চ্যানেলগুলোতে তো ফ্রি কন্টেন্ট দিতে পারছেন। আর পাবলিক তো ফ্রি জিনিসই বেশি পছন্দ করে। কন্টেন্ট ভাল হলে অনেক অডিয়েন্স আবার সেই কন্টেন্টগুলো বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ারও করে থাকেন। এটা কন্টেন্ট মার্কটিয়ের একটা প্লাস পয়েন্ট।

তবে কন্টেন্ট মার্কেটিংয়ে একটা কথা অবশ্যই মনে রাখবেন, Marketing is impossible without great content!

শুক্রবার, ৮ মার্চ, ২০১৯

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে কন্টেন্ট কি?



ট্রেডিশনাল মার্কেটিংয়ে আমরা কি কখনও দেখেছি মার্কেটাররা বা মার্কেটিং রিপ্রেজেন্টিটিভরা সরাসরি কাউকে কি বলে যে, ভাই এই প্রোডাক্টটি খুব ভাল নেন! নিশ্চয় না। প্রোডাক্টটি কাউকে নেওয়ার কথা বলার আগে রিপ্রেজেন্টিটিভরা আগে সেই পণ্যের গুনাগুন বলে, পণ্যটি আপনার কি উপকারে আসবে সেই কথা বলে, বিভিন্ন ফিচারের কথা  বলে। তারপর পণ্যটি নেওয়ার কথা বলে। ডিজিটাল মার্কেটিংয়েও আপনি কাউকে ডিজিটাল চ্যানেলগুলোতে আপনার পণ্য বা সেবা নেওয়ার কথা সরাসরি বলতে পারবেন না। আর গুগল বা যে কোন সার্চ ইঞ্জিন তো কখনই এমনি এমনি আপনার ওয়েবসাইটে কোন ইউজারকে রেফার করবেনা। হ্যাঁ, এ জন্য প্রয়োজন কন্টেন্ট। বিশেষ করে যারা SEO, এফিলিয়েট মার্কেটিং বা গুগল এডসেন্স নিয়ে কাজ করেন তাদের জন্য তো এই কন্টেন্ট খুবই জরুরি!

এখন প্রশ্ন আসে কন্টেন্ট কি? এক কথাই যদি বলি কন্টেন্ট হচ্ছে ডিজিটাল চ্যানেলগুলোতে উপস্থাপন বা পোস্টিং এর রসদ বা মেটেরিয়াল। আরো ভালভাবে বললে কন্টেন্ট হচ্ছে আপনার পণ্য বা সেবা এবং নির্দিষ্ট কোন কী ওয়ার্ডের বিস্তারিত উপস্থাপন। আপনি যদি কোন পণ্য বিক্রি করতে চান তাহলে সেই পণ্যের সুবিধা অসুবিধা, গুণাগুণ তুলে ধরবেন। আপনি যদি কোন সেবাদাতা হয়ে থাকেন তাহলে আপনি কিভাবে সেবা প্রদান করে থাকেন সে বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরবেন। অথবা আপনি যদি এফিলিয়েট অথবা ব্লগিং করেন তাহলে যেই কী ওয়ার্ড নিয়ে কাজ করেন সেই কী ওয়ার্ডের বিষয়বস্তু তুলে ধরবেন।

এখন আসা যাক কন্টেন্ট কি কি ধরণের হতে পারে। কন্টেন্ট সাধারণত চার ধরণের হয়ে থাকে।

১. টেক্সট- টেক্সট কন্টেন্ট হচ্ছে আপনি যা লেখে বা টাইপ করে বুঝাতে পারেন। ধরুন পণ্য বা সেবা সম্পর্কে বিস্তারিত লিখলেন। অথবা নির্দিষ্ট কোন কী ওয়ার্ড নিয়ে লেখে বা টাইপ করে তথ্য উপস্থাপন করলেন।

২.ইমেজ বা ছবি- ধরুন আপনি আপনার পণ্যের বা সেবার কোন ডিজিটাল চ্যানেলে ফটোগ্রাফি তুলে ধরলেন। অথবা কোন তথ্যের একটা গ্রাফিক্যাল ভিউ তুলে ধরলেন। এটাই হচ্ছে ইমেজ কন্টেন্ট।

৩. অডিও- অডিও কন্টেন্ট হচ্ছে কোন কিছু বলে বা সাউন্ড দিয়ে বোঝানো। এই যে আমি বলে বোঝাচ্ছি এটাই অডিও কন্টেন্ট। অথবা কোন মিউজিক বা গানও অডিও কন্টেন্টের মধ্যে পরে।

৪.ভিডিও- এই যে আমি ইউটিউবে ভিডিওটি আপলোড করে কন্টেন্ট সম্পর্কে আপনাদের বোঝাচ্ছি এটাই একটা ভিডিও কন্টেন্ট।