![]() |
পহেলা বৈশাখ উদযাপন |
পহেলা বৈশাখ বাঙ্গালির সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে। এবং এটি এখন বাংলা সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ। বৈশাখের এই উদযাপনকে বর্তমানে অনেকেই তুলনা করছেন ব্রাজিলের বিখ্যাত উৎসব "কার্নিভাল" এর সাথে।
স্বভাবতই অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে পহেলা বৈশাখের এই উদযাপন শুরু হয়েছিল ঠিক কখন বা কিভাবে? আর কারাই বা এটা শুরু করেছেন?
অনেকেই হয়ত মনে করে থাকেন বাঙ্গালিরা প্রাচীনকাল থেকে আনন্দঘন দিন হিসেবে এই পহেলা বৈশাখের উদযাপন করে আসছেন! কিন্তু তা নয় এর পিছনে লুকিয়ে আছে কৃষক আত্মহত্যার করুণ ইতিহাস।
প্রথমে চলুন জেনে আসি বাংলা বর্ষের শুরুটা হল কিভাবে।
খ্রিস্টীয়, গ্রেগরিয় ও গ্রীক বর্ষপঞ্জির মতই ৫৯৩ খ্রিস্টাব্দে রাজা শশাঙ্ক ভারতবর্ষে প্রথম বাংলা বর্ষপঞ্জির শুরু করেন। তবে ৫৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ঠিক কত তারিখ থেকে বাংলা বর্ষ গণণা শুরু হয়েছিল এবং কি নামে চালু হয়েছিল সেটির সঠিক তথ্য কোথাও পাওয়া যায়নি।
তবে বাঙ্গালীর ঐতিহ্যের সাথে এই পহেলা বৈশাখ যুক্ত হয় মোগল সম্রাট আকবরের আমল থেকে। যদিও সম্রাট আকবর নিজে বাঙালি ছিলেন না। সম্রাটের আদেশ মতে রাজকীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফতেহউল্লাহ সিরাজি সৌর সন এবং আরবি হিজরী সনের উপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম বিনির্মাণ করেন। এবং এটি ছিল রাজা শশাংকেরই সেই বর্ষপঞ্জির সংস্করণ মাত্র। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মার্চ বা ১১ই মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় (৫ই নভেম্বর, ১৫৫৬) থেকে। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে "বঙ্গাব্দ" বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়।
সম্রাট আকবরের এই বর্ষপঞ্জি চালুর পিছনে লুকিয়ে আছে করুন ইতিহাসটি। মুলত সম্রাট আকবর দুইটি কারণে এই বাংলা বর্ষপঞ্জি চালু করেন।
প্রথমত, আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় (৫ই নভেম্বর, ১৫৫৬) দিনটিকে স্বরণীয় করে রাখতে, যার কারণে ৫ই নভেম্বর, ১৫৫৬ ইং থেকেই গণণা কার্যকর করা হয়।
দ্বিতীয়ত, কৃষকদের কাছ থেকে খাজনা আদায়ের বার্ষিক একটা দিন ধার্য, যার কারণে পঞ্জিকার শুরুটা করা হয়েছিল ফসলের মৌসুমিকালকে হিসেব করে এবং এর নাম দেওয়া হয়েছিল "ফসলি সন"। এবং কৃষকদের এই খাজনা দিতে হত পহেলা বৈশাখে।
পহেলা বৈশাখ আসন্ন হলেই কৃষকদের উপর খাজনা দেওয়ার খড়ংগ নেমে আসত। খাজনা দিতে না পারলে কৃষকদের উপর করা হত পাশবিক নির্যাতন।
আবার অনেক কৃষক মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করত। কিন্তু মহাজনরাও পহেলা বৈশাখের দিনটিতে হালখাতার দিন হিসেবে ধার্য করে রাখত।
খাজনা ও ঋণের আর্থিক দুশ্চিন্তায় পহেলা বৈশাখ এলেই অনেক কৃষক আত্মহত্যা করত। সম্রাট আকবর দিনটিকে আনন্দময় হিসেবে সাধারণ প্রজাদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করলেও আসলে বাঙ্গালিদের জন্য পহেলা বৈশাখ ছিল বেদনাময় এবং দূঃসহ একটি তারিখ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন