মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৪

তরুণ সমাজের ভাবনা ও রাজনীতি


রাজনীতিতে আধুনিকায়ন শব্দটা এখনো অধরা। অনেক রাজনীতিবিদই হয়তো বলতে পারেন রাজনীতিতে আবার আধুনিকায়ন বিষয়টা কি? আমরা 'বিশ্বায়ন' শব্দটার দিকে একটু তাকাতে পারি। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের টার্গেট সহ বিশ্বায়নের মূলমন্ত্র হচ্ছে আধুনিকায়ন। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের সাথে সাথে পরিবর্তনশীল একটা সমাজ ব্যাবস্থা বা উন্নত একটা ধারার আবহ সৃষ্টি করাটাই মূলত বিশ্বায়ন। ঠিক তেমনি রাজনীতিতে আধুনিকায়ন এখন একটা সময়ের দাবি। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলের বিশেষ করে বুর্জুয়া রাজনৈতিক দলের ধারকরা মূলত প্রবীন। অপরদিকে বাংলাদেশের বিশাল একটা জনগোষ্ঠী হচ্ছে তরুণ সমাজ। স্বভাবতই চিন্তা-চেতনায় ও মননে প্রবীন ও তরুণদের মাঝে সবসময় একটা বিস্তর ফাঁরাক থেকে যায়। এটা যে কোন প্রজন্মের ক্ষেত্রে ঘটে। যেমন আমরা যারা এখন তরুণ কিন্তু পরবর্তী প্রজন্মের সাথে স্বভাবতই একটা ফাঁরাক তৈরী হয়ে যাবে কারণ পরবর্তী প্রজন্ম হবে আমাদের থেকে আরো আধুনিক। প্রজন্মের মাঝে এই পার্থক্যটা আমাদের প্রবীণ রাজনীতিবিদরা উপলব্ধি করলেও সেটা জনসম্মুখে স্বীকার করেনা কারণ এতে করে তাদের মাঝে সমন্বয়হীনতার একটা দূর্বলতা প্রকাশ পায়। বর্তমান সময়ে তরুণদের রাজনীতির প্রতি অনীহার একটা অন্যতম কারণ প্রবীন রাজনীতিবিদদের সাথে তরুণদের কোন সমন্বয় নেই বললেই চলে। 

বাজার ব্যাবস্থার দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন ধরণের কোম্পানিগুলো এখন তরুনদের টার্গেট করছে। এর পিছনে মূলত দুটো কারণ আছে, প্রথমত, জনগোষ্ঠীর বিশাল একটা অংশ তরুন। দ্বিতীয়ত, সামাজিক গণমাধ্যম ও মোবাইল কমিনিনিউকেশনে তরুণরা বেশি যুক্ত থাকায় এই মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে যে কোন পণ্যের প্রচারণা খুব দ্রুত হচ্ছে। 

এবার শিরোনাম প্রসঙ্গে আসি, প্রথমেই বলেছি তরুণদের রাজনীতির প্রতি অনীহার একটা অন্যতম কারণ প্রবীন রাজনীতিবিদদের সাথে সমন্বয়হীনতা। প্রশ্ন আসতে পারে সমন্বয়টা আসবে কিভাবে? প্রথমেই বিবেচনায় নিয়ে আসতে হবে তরুণদের ভাবনাটা কি? প্রযুক্তির এই যুগে তরুণদের চাওয়া হচ্ছে সব কিছুর যোগাযোগটা যেন প্রযুক্তির মাধ্যমে হয়। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর এজেন্ডা হতে পারে প্রযুক্তি নির্ভর। কিংবা কর্মসূচি গুলোর মধ্যে থাকতে হবে আধুনিকতার ছোঁয়া। রাজনীতিবিদ কিংবা রাজনৈতিক দলগুলোর চিন্তা ও মননে আধুনিকতার ছোঁয়া থাকলেই কেবল তরুণরা রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হবে। 

বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো কতটা প্রযুক্তি নির্ভর সেই প্রসঙ্গে আসলে দেখা যাবে শুধুমাত্র বিএনপি, আওয়ামীলীগসহ হাতে গোনা কয়েকটি দল অফিসিয়াল ওয়েবসাইট খুলে দিয়েই কেবল তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে। নিয়মিত হালনাগাদের বিষয়টি এখনো উপেক্ষিত। সামাজিক মাধ্যমগুলোতেও তাদের উপস্থিতি নগণ্য। কিংবা হলেও তরুণদের নিয়ে কাজ করার নেই কোন বিশেষ স্বদিচ্ছা বা দিক নির্দেশনা। গত নির্বাচনী ইশতেহারগুলোতে আওয়ামীলীগ তরুণদের জন্য ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানের কথা বললেও এর বাস্তাবায়ন নিয়ে নেই কোন বিশেষ অগ্রগতি। অপরদিকে বিএনপি তরুণদের নিয়ে কাজ করার কথা বললেও কিভাবে বা কি ধরণের কাজে সম্পৃক্ত করে তরুণদের সাথে সমন্বয় করা হবে এর স্বচ্ছ কোন দিক নির্দেশনা পাওয়া যাচ্ছে না। 

তবে আশার কথা হাতে গোনা যে সব তরুণ এখন রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন তারা স্ব-ইচ্ছায় নিজ নিজ পছন্দনীয় আদর্শিক দলের হয়ে প্রযুক্তিকে সাথে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন যদিও প্রবীণ রাজনীতিবিদদের উৎসাহ এখনো উপেক্ষিত।   

রাজনীতিতে এভাবে তরুণদের অনীহা চলতে থাকলে পরবর্তী নেতৃত্ব স্বভাবতই একটা সংকটের মধ্যে পরবে। মেধাশুণ্য বা তরুণ নেতৃত্ব বাদে দেশে সার্বিক উন্নয়ন কখনো সম্ভব নয়। এতে করে সব কিছুই নষ্টদের দখলে চলে যাবে। কূটনৈতিক সম্পর্কসহ দেশের প্রয়োজনে বড় বড় সিদ্ধান্তগুলো মুখ থুবড়ে পরবে। তাই দল ও দেশের প্রয়োজনে প্রতিটি দলের প্রবীন রাজনীতিবিদদের উচিৎ দলের দিক নির্দেশনায় আধুনিকায়নের মাধ্যমে দেশের তরুণ সমাজকে সম্পৃক্ত করা। 

(ঢাকা, ২৫-১১-২০১৪)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন