মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২

জামালপুর জমিদারবাড়ি মসজিদ ও সংগ্রহশালা

 

                                                                জামালপুর জমিদারবাড়ি মসজিদ


ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে পীরগঞ্জ থানায় যাওয়ার পথে বিমান বন্দর পেরিয়ে শিবগঞ্জ হাট সেখান থেকে তিন কিলোমিটার পশ্চিমে জামালপুর নামক গ্রামে জামালপুর জমিদারবাড়ি ও জামালপুর জমিদারবাড়ি জামে মসজিদের অবস্থান। জমিদারবাড়ী এরিয়ার ভিতরে প্রবেশ করতেই এর মূল ফটকেই চোখে পরবে কারুকার্জ মন্ডিত রাজকীয় তোরণ। মূল ফটক দিয়ে ঢুকতেই ডানে চোখে পরবে বেষ্টনীকৃত সুন্দর একটি ঘোড়ার গাড়ি। মূলত এটি জমিদার এবং জমিদার পরিবারের সদস্যদের যাতায়াতে পরিবহন হিসেবে ব্যাবহৃত হত। মুল ফটক থেকে ১০-১২ গজ এগোতেই হাতের বামে পশ্চিমে চোখে পরবে গম্বুজ ও মিনার সমৃদ্ধ সাদা রংগের সুন্দর একটি মসজিদ। মসজিদটি সম্পর্কে জানার আগে জমিদারবাড়ি সম্পর্কে বলি  এবং আপনাদের জানাই এর ইতিহাস। 

মসজিদ চত্ত্বর থেকে পূর্ব -উত্তর কোণায় জমিদারবাড়িটির অবস্থান। কথিত আছে তাজপুর পরগনার জমিদার  রওশন আলীর বংশধর জামাল উদ্দিন নামক এক ব্যক্তি অঞ্চলে আসেন এবং তৎকালীন ভারতীয় বৃটিশ শাসকদের কাছ থেকে এই অঞ্চলের জমিদারী পান জমিদার জামাল উদ্দিন ১৮৬২ সালে এই জমিদারবাড়ির ভিত্তি স্থাপন করেন। তবে জমিদার জামাল উদ্দিনের ধর্মভীরুতা ও ইসলামপ্রীতির কথা শুনলে অবাক না হয়ে পারবেন না। বাড়িটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই ১৮৬৭ সালে ফটক সংলগ্ন মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করেন জমিদার জামাল উদ্দিনব্যায়বহুল মসজিদটি নির্মাণ করতে গিয়ে জমিদারবাড়ির কাজই অসমাপ্ত থেকে যায়। অর্ধসমাপ্ত ভঙ্গুর জমিদারবাড়িটি দেখলেই এর সত্যতা পাওয়া যায়। তবে নির্মাণ কাজ শেষ না হলেও জমিদারবাড়ির তৎকালীন নির্মাণশৈলী ও সৌন্দর্য আপনাকে এখনো বিমোহিত করবে। জমিদারের উত্তরসূরীরা কিছুটা সংস্কার করে এখন বাসযোগ্য করে তুলেছেন এই বাড়িটিকে। 

জমিদারবাড়ির মুল আকর্ষণ এখানে অবস্থিত মসজিদটি। যেটি জামালপুর জমিদারবাড়ি মসজিদ নামেই অবিহিত। মূল ফটকে প্রবেশের পর হাতের বাম পাশেই চোখে পরবে মসজিদটি। মসজিদ অঙ্গনে প্রবেশমুখে আছে চার থামের উপর ছাদ বিশিষ্ট মূল দরজা। মসজিদের উপরে বড় আকৃতির তিনটি গম্বুজ, গম্বুজের শীর্ষদেশ কাচ পাথরের কারুকার্জ করা। এই মসজিদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর মিনারগুলোর নকশা মসজিদের ছাদে মোট আটাশটি মিনার আছে একেকটি মিনারের উচ্চতা প্রায় ৩৫ ফুট এবং প্রতিটিতে নানা নকশা করা রয়েছে এত মিনারওয়ালা কোন মসজিদ দেখতে পাওয়া বিরল ব্যপার  

মসজিদটি চারটি অংশে ভাগ করা তাহলো মূল কক্ষ, মূল কক্ষের সঙ্গে ছাদসহ বারান্দা, ছাদবিহীন বারান্দা এবং ছাদবিহীন বারান্দাটি অর্ধ প্রাচীরে বেষ্টিতখোলা বারান্দার প্রাচীরে এবং মূল দরজার ছাদে ছোট ছোট মিনারের নানান নকশা রয়েছে মূল কক্ষের বাইরের দিক থেকে পরিমাপ হচ্ছে ২৯ × ৪৭ ফুট এবং ছাদবিহীন বারান্দার পরিমাপ ২১ × ৪৭ ফুটমূল কক্ষের কোণগুলো তিন থাম বিশিষ্ট এবং ছাদযুক্ত বারান্দায় আরো চারটি থাম রয়েছে।

মসজিদের মূল কক্ষে প্রবেশে রয়েছে তিনটি দরজা। মসজিদের ভিতরে উত্তর ও দক্ষিণে রয়েছে দুটি জানালা এবং মিম্বর সংলগ্ন দুই পাশে দুটি কুলুঙ্গি। পুরো মসজিদটির ভিতরে বাইরের দেয়ালগুলোতে প্রচুর লতাপাতা ফুলের নকশা রয়েছে

ভারতের উত্তর প্রদেশের হংসরাজ এবং তার পুত্র রামহিৎ মসজিদটির মূল কারিগর দ্বারভাঙ্গা এলাকার কারিগরেরাও নির্মাণ কাজে অংশ নেয়

বাংলাদেশ প্রত্নতত্ন অধিদপ্তরের তালিকাভূক্ত জামালপুর জমিদারবাড়ি জামে মসজিদে এক সাথে ৩০০-৬০০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে।   

মসজিদের পশ্চিম –দক্ষিণ কোণেই  একটি সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা করেছেন জমিদারদের নবম পুরুষের একজন হামিদুর রহমান চৌধুরী, যেটির নাম দিয়েছেন জামালপুর এষ্টেট যাদুঘর। তিনি আমাদের এই সংগ্রহশালাটি পুরো ঘুরে দেখালেন। 

আগত দর্শনার্থীদের জন্য মসজিদ চত্ত্বরেই  বসার জন্য রয়েছে  সুন্দর একটি জায়গা।  

উত্তরবঙ্গের ছোট এই ঐতিহাসিক জায়গাটিতে ভ্রমণে আসার আমন্ত্রণ রইল সবার।