এক কাতারের গায়েবি মসজিদ
ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার উত্তরে শান্ত-নীরব একটি গ্রামে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে একটি অতি পুরাতন মসজিদ।
গ্রামের নাম মেদনী সাগর তাই মসজিদটি এখন
মেদনী সাগর জামে মসজিদ নামেই অভিহিত।
তবে স্থানীয়দের কাছে এই মসজিদটির একটি ভিন্ন
পরিচিতি আছে। স্থানীয়দের মাঝে এই মসজিদ নিয়ে
একটি বিশ্বাস প্রচলিত আছে যে, কোন এক সময় এক রাতেই হঠাৎ করে জ্বীনেরা এই
মসজিদ নির্মান করেছিল। তাই মসজিদটিকে গায়েবি মসজিদও বলে থাকেন অনেকে।
মসজিদটির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট হচ্ছে এর কাতার
ধারণ ক্ষমতা মাত্র একটি এবং এই এক কাতারে
প্রায় ৩০ জন মুসুল্লি একসাথে নামাজ আদায় করতে পারে।
তবে মসজিদটির নির্মাণে মোঘল আমলের স্থাপত্যশৈলী
বিদ্যমান। ধারণা করা হয় মোঘল আমলে এই অঞ্চলে ইসলামের প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে
যেসব পীর -আউলিয়া এই বংগে এসেছিলেন তাদের মধ্যে কারো প্রচেষ্টায় এই মসজিদটি
নির্মিত হয়েছিল। মসজিদটি ছোট হলেও এর নিখুত নির্মান
অত্যন্ত রুচিশীল ও সৌখিন।
বাইরের দিক থেকে মসজিদের দৈর্ঘ্য সাড়ে একত্রিশ ফুট এবং প্রস্থ চৌদ্দ ফুট। ভিতরের দিকে এর দৈর্ঘ্য চবিবশ ফুট এবং প্রস্থ ছয় ফুট।
কাতারের দুই পাশে রয়েছে দুটি জানালা।
যথারীতি মসজিদটিতে ইমামের জন্য রয়েছে মিম্বার ও
মেহরাব।
ভিতরে গোলাকৃতি গম্বুজগুলোর অবয়ব দৃশ্যমান। একটি গম্বুজ থেকে আরেকটি গম্বুজের মাঝের
অংশগুলোতে রয়েছে বিশেষ বিম।
রয়েছে আটটি কুলুঙ্গি ও তিনটি খিলান। তবে বর্তমানে ভিতরের দেওয়ালসহ এগুলো
টাইলস দিয়ে আবৃত।
তবে কাতার একটি হলেও মসজিদটিতে প্রবেশের জন্য
দরজা আছে তিনটি।
মসজিদটির উপরের অংশে রয়েছে তিনটি
গম্বুজ ও
পূর্ব-পশ্চিমে ৪টি করে ৮ টি মিনার সদৃশ্য বুরুজ। গম্বুজ ৩টি ছাদ থেকে প্রায় ১০ ফুটউচ্চতা বিশিষ্ট। ভূমি
থেকে প্রতিটি বুরুজের
উচ্চতা ১০ফুট।
সময়ের প্রয়োজনে মুসুল্লির ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে মূল
মসজিদকে সংযুক্ত করেই সম্প্রসারিত করা হয়েছে এখন মসজিদের সামনের অংশটি।
যুগ যুগ ধরে এই ছোট মসজিদটিই উপমহাদেশে ইসলাম
বিস্তারের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। হয়ত আরো শত শত প্রজন্মের কাছেও সাক্ষী হয়ে
থাকবে।