শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৯

পাখির খামারে বেকারত্ব দূর !



প্রথাগত হাস-মুরগির খামারের পাশাপাশি গড়ে উঠছে এখন পাখির খামার। দেশে যখন কর্মসংস্থানের অভাব তখন তরুণ উদ্যোমীরা বেছে নিচ্ছে এই ব্যাতিক্রমী পেশা। 

তেমনই একজন তুহিন পারভেজ সুজন। ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার এই তরুণ স্বল্প পরিসরে গড়ে তুলেছেন  পাখির খামার। শখের বসে শুরু করলেও এটি এখন বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনা করেন তিনি। 



খামারে তিনি প্রতিপালন করছেন কোয়েল পাখি। কয়েল পাখি প্রচুর পরিমানে ডিম দিয়ে থাকে। তাছাড়াও এই পাখির ডিম ও মাংসের প্রচুর চাহিদা আছে বাজারে। বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়ায় এই পাখিটি ঝামেলাহীন ভাবেই প্রতিপালন করা যায়।

লাভ বার্ড। দেখতে সুন্দর এই পাখিটি মূলত অনেকেই শখের বসে পোষে থাকেন । তবে বাজারে লাভ বার্ডের প্রচুর দাম ও চাহিদা আছে। দেশি ও বিদেশি কয়েকটি প্রজাতির লাভ বার্ড প্রতিপালন করছেন তুহিন পারভেজ। বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়ায় এই পাখিটিও প্রতিপালন করা যায়।

ঘুঘু। দেশিয় এই পাখিটিও এখন খামারে প্রতিপালন হচ্ছে। প্রচুর পরিমানে ডিম ও মাংস উৎপাদনে যেমনি ঘুঘুর আছে অনেক সক্ষমতা তেমনি বাজারে এর চাহিদাও আছে প্রচুর। 

কবুতর। যদিও অনেকে এই পাখিটি শখের বসে প্রতিপালন করে থাকেন তবে এখন এটি বাণিজ্যিকভাবেও প্রতিপালন হচ্ছে। কবুতরের রয়েছে বিভিন্ন প্রকার দেশি ও বিদেশি জাত এবং এই পাখিটিও প্রচুর পরিমানে ডিম ও মাংস প্রদানে সক্ষম।

এসব পাখি প্রতিপালনের পাশাপাশি তুহিন পারভেজ করছেন টার্কি মুরগি, রাজহাঁস ও পাতিহাঁস  প্রতিপালন। 

শখের বসে করেন টিয়া ও খরগোশ প্রতিপালন। সবসময় আপন মমতায় আগলে রাখেন প্রাণীগুলোকে। 

এসব পাখি প্রতিপালনে পাখির বাসস্থান হিসেবে তুহিন পারভেজ ব্যাবহার করছেন  দেশিয় তারের তৈরী নেট, তারের খাঁচা, বাঁশ, মাটি ও কাঠের তৈরি বিভিন্ন উপকরণ। 

খাবার হিসেবে দেশিয় বাজারে প্রাপ্ত বিভিন্ন ধরণের ফিড খাওয়ান এসব পাখিদের। 

বেকারত্ব দূরীকরণে পাখির খামার হয়ে উঠতে পারে অন্যতম আয়ের উৎস। তবে খেয়াল রাখতে হবে এতে করে যেন জীববৈচিত্রের কোন প্রকার ক্ষতি না হয়। 















রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৯

মাওলানা ভাসানী, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা!

মাওলানা ভাসানী
মাওলানা ভাসানী 
স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, হ্যা তিনিই ছিলেন প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা। গরীব মেহনতি ও নির্যাতিত মানুষের জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। 

মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধানগড়া পল্লীতে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা হাজী শারাফত আলী। হাজী শারাফত আলী ও বেগম শারাফত আলীর পরিবারে ৪ টি সন্তানের জন্ম হয়। একটি মেয়ে ও তিনটি ছেলে। মোঃ আব্দুল হামিদ খান সবার ছোট। তার ডাক নাম ছিল চেগা মিয়া। ছেলে-মেয়ে বেশ ছোট থাকা অবস্থায় হাজী শারাফত আলী মারা যান। কিছুদিন পর এক মহামারীতে বেগম শারাফত ও দুই ছেলে মারা যায়। বেঁচে থাকেন ছোট শিশু আব্দুল হামিদ খান।

পিতৃহীন হামিদ প্রথমে কিছুদিন চাচা ইব্রাহিমের আশ্রয়ে থাকেন। ওই সময় ইরাকের এক আলেম ও ধর্ম প্রচারক নাসির উদ্দীন বোগদাদী সিরাজগঞ্জে আসেন। হামিদ তার আশ্রয়ে কিছুদিন কাটান।

মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী যৌবনের শুরুতেই গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চিরদিনের জন্য গৃহত্যাগ করেন।

তিনি ছিলেন বিংশশতকী ব্রিটিশ ভারতের অন্যতম তৃণমূল রাজনীতিবিদ ও গণআন্দোলনের নায়ক, যিনি জীবদ্দশায় ১৯৪৭-এ সৃষ্ট পাকিস্তান ও ১৯৭১-এ প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

১৯২৯-এ আসামের ধুবড়ী জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাসান চরে প্রথম কৃষক সম্মেলন আয়োজন করেন। এখান থেকে তার নাম রাখা হয় "ভাসানীর মাওলানা"।

তিনি সূফী এবং তাসাউফের সাধনা শেষে দেওবন্দ থেকে রবুবিয়াতের রাজনৈতিক দর্শনের শিক্ষা নিয়ে ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট গঠনকারী প্রধান নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম।

তিনি ছিলেন একজন দূরদর্শী নেতা এবং পঞ্চাশের দশকেই নিশ্চিত হয়েছিলেন যে পাকিস্তানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ একটি অচল রাষ্ট্রকাঠামো। ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের কাগমারী সম্মেলনে তিনি পাকিস্তানের পশ্চিমা শাসকদের 'ওয়ালাকুমুসসালাম' বলে সর্বপ্রথম পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতার ঐতিহাসিক ঘণ্টা বাজিয়েছিলেন।

অথচ আওয়ামী লীগের এই প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিকে স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন গৃহবন্দি করে রাখা হয়। ১৯৭২ সালের ৯ই এপ্রিল ঢাকার পল্টন ময়দানে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জনসভায় তিনি ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেন। ভারতীয় আগ্রাসন ও আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেন। দেশব্যাপী দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে ১৯৭৪ সালে ভাসানীর ভুখা মিছিল বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে।

১৯৭৬ সালে ফারাক্কা অভিমুখে ঐতিহাসিক লংমার্চের নেতৃত্ব দিয়ে তিনি ভারতের সেবাদাসদের চক্ষুশূলে পরিনত হন। আর একারনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা হয়েও আওয়ামী লীগের কাছ থেকে প্রাপ্য সম্মানটুকু পাননি। আওয়ামী লীগের কাছে তিনি কেবলই আজ এক বিস্মৃতির নাম।

১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই দেশ বরেণ্য নেতা মৃত্যুবরণ করেন। তাকে টাংগাইল জেলার সদর উপজেলার উত্তর-পশ্চিমে সন্তোষ নামক স্থানে পীর শাহজামান দীঘির পাশে সমাধিস্থ করা হয়। সারা দেশ থেকে আগত হাজার হাজার মানুষ তার জানাযায় অংশগ্রহণ করে।