রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

ব্যাঙ কেন সাপ খায়?

                                                               ব্যাঙ যখন সাপ খায় 

প্রকৃতি , পরিবেশ ও প্রাণীবৈচিত্র একটি বাস্তুসংস্থানের নিয়ম দ্বারা পরিচালিত। প্রাণীকূলের খাদ্যাভাসও এই বাস্তুসংস্থানের নিয়ম দ্বারা পরিচালিত হয়। প্রাণীজগতে অপেক্ষাকৃত ছোট প্রাণীরা হচ্ছে বড় প্রাণীগুলোর খাবার। যেমন  লতাপাতা হরিণের খাবার আবার হরিণ বাঘের খাবার। এভাবেই একটি রিসাইকেল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পৃথিবী ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা হয়ে আসছে। 

কিন্তু মানব কতৃক পরিবেশ দুষণ ও বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কারণে প্রকৃতির ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে দেখা দিচ্ছে খাদ্যাভাবের। বিরুপ আকার ধারণ করছে প্রকৃতি। 

প্রকৃতির বিরুপ প্রতিক্রিয়ার কারণে দেখা দিচ্ছে খাদ্যাভাবের, আর এই খাদ্যাভাবের কারণে প্রাণীকূলে দেখা দিচ্ছে খাদ্যাভাসের অদ্ভুত পরিবর্তন। জীববিজ্ঞানীরা এই রকম বিপরীত খাদ্যাভ্যাসকে পৃথিবীর প্রকৃতি ও মানবজাতির জন্য অশনিসংকেত হিসেবে দেখছেন!

ব্যাঙ হচ্ছে সাপের খাবার কিন্তু দেখা যাচ্ছে ঘটছে উল্টো ! খোদ সাপেই পরিণিত হচ্ছে ব্যাঙের খাবারে।

সাপুড়ে তোঁতা মিয়ার মৃত্যুর আগে সাপ ছোবল দেওয়ার দৃশ্য

                                             তোঁতা মিয়াকে সাপ ছোবল দেওয়ার দৃশ্য


সাপুড়ে তোঁতা মিয়ার বাড়ি ছিল ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার চৌরঙ্গী বাজারে। বাংলাদেশে তিনিই প্রথম সাপের খামার করেছিলেন। বিভিন্ন ধরণের সাপের সংগ্রহ ছিল তার কাছে। প্রাকৃতিকভাবে সাপের প্রজনন ঘটিয়ে সাপের বাচ্চা উৎপাদন করতেন। সেই সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় বেশ কয়েকবার শিরোণাম হয়েছিল তার এই সাপের খামারের খবর। খামারটি এক পলক দেখার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক মানুষ ছুটে আসতেন। দেশের বাইরে থেকেও আসতেন অনেক পর্যটক। তার এই সাপের খামারটি হয়েছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের গবেষণার বিষয়বস্তু।

২০০৭ সালে তারই পালিত এক সাপ ছোবল দিলে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিষক্রিয়া নিষ্ক্রিয় না হওয়ায় দুদিন পর তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেন।

তার মৃত্যুর পর সাপ সহ কয়েক হাজার সাপের বাচ্চা মারা যায়, কিছু সাপ ঢাকা চিড়িয়াখানায় স্থানান্তরিত করা হয় ও কিছু সাপ চট্টগ্রাম ভার্সিটির প্রাণীবিদ্যা বিভাগ নিয়ে যায়।

সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

বাঁশের বাঁশির ইতিহাস ও আদ্যোপান্ত

                                                                        বাঁশের বাঁশি 


বাঁশি এক ধরনের সুষির অর্থাৎ ফুৎকার (ফুঁ) দিয়ে বাজানো যায় এমন বাদ্যযন্ত্র । বাংলায় বাঁশিকে মুরালি, মোহন বাঁশি, বংশী অথবা বাঁশরিও বলা হয় । বাঁশির পাশ্চাত্য সংস্করনের নাম ফ্লুট (flute) 

অ্যাড্রাল পাওয়েলের মত অনুসারে, অনেক প্রাচীন সংস্কৃতিতে বাঁশির মতো সরল যন্ত্রের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। লোকমত এবং পুরাতত্ত্বের দিক থেকে বিচার করলে বাঁশির তিনটি জন্মস্থান চিহ্নিত করা যায়: মিশর, গ্রিস ও ভারত। আড়াআড়ি বাঁশি এই তিনটে জায়গাতেই পাওয়া গেলেও পাশাপাশি বাজানোর (অনুদৈর্ঘ্য) বাঁশি একমাত্র প্রাচীন ভারতেরই অবদান। পাওয়েলের ধারণা, মধ্যযুগের পর থেকে ভারতীয় বাঁশির গঠনে তেমন কোনো বিবর্তন হয়নি। তাছাড়া ভারতীয় বাঁশি থেকে সামান্য আলাদা নকশার বাঁশি দেখা যায় চীনে, সেই ভিত্তিতে বলাই যায়, প্রথম বাঁশির জন্ম ভারতেও হয়নি, চীনেও হয়নি। সম্ভবত এর জন্ম হয়েছিল আরো অনেক আগে, মধ্য এশিয়ায়।

মধ্যযুগের ভারতীয় বাঁশি অন্যান্য সংস্কৃতিতে বেশ প্রভাব বিস্তার করেছিল। মধ্যযুগীয় ইউরোপীয় শিল্পকলায় বাঁশির প্রভাব এতটা বেড়েছিল যে, লুসার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের ছাত্র লিয়েন এলিচের মত ছিল, বাঁশি ১০ম শতাব্দীতে ভারত থেকে বাইজান্টিয়াম সাম্রাজ্যে পৌঁছায় এবং ভারতের মতোই ইউরোপেও জনপ্রিয়তা লাভ করে।
সংগীত-ইতিহাসবিদ ব্রুনো লক্ষ করেছেন, ভারতের সমস্ত প্রাচীন পুরাতাত্ত্বিক ভাস্কর্য ও চিত্রকলায় বাঁশিকে অনুভূমিকভাবে (একটু নিচু করে) বাজানোর রীতি পাওয়া যায়। সঙ্গে এটাও লক্ষণীয় যে, সেকালে বাদ্যযন্ত্র বাজানোতে কোনো লিঙ্গভেদ ছিল না নিদর্শনগুলোতে প্রচুর নারীশিল্পীর ছবিও পাওয়া গেছে। কিন্তু পঞ্চদশ শতাব্দী শুরু হতেই বাঁশি বাজানোর অধিকার ক্রমে ক্রমে পুরুষদের দখলে চলে যায় আর বাজানোতে আড়াআড়ি পদ্ধতির শুরু হয়। সম্ভবত ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের আগমন ও হিন্দুস্তানি সংগীতের উপর পশ্চিম এশীয় প্রভাব এই পরিবর্তনের জন্য দায়ী ব্রুনো ব্যাখ্যা করেছেন।

শিল্প ও সংগীত বিষয়ক সংস্কৃত গ্রন্থ নাট্যশাস্ত্রে (~২০০ খ্রিঃপূঃ থেকে ২০০ খ্রিস্টাব্দ) উল্লিখিত হয়েছে, বাঁশি সে সময়ের এক গুরুত্বপূর্ণ বাদ্যযন্ত্র ছিল। অনেক হিন্দুগ্রন্থে বাঁশি বা বেণুকে সংগীতকলায় ব্যবহার করার জন্য মানুষের গলার স্বর ও বীণার পরিপূরক হিসেবে দেখানো হয়েছে (বাণী-বীণা-বেণু)। ঋগ্বেদের(১৫০০-১২০০ খ্রিঃপূঃ) মতো প্রাক্‌বৈদিক ও বৈদিক গ্রন্থে একে নাদী আর তূণব এবং পরবর্তী বৈদিক যুগের হিন্দু গ্রন্থে বাঁশিকে বেণু বলা হয়েছে। উপনিষদ যোগেও এর উল্লেখ আছে।

বংশী জাতীয় যন্ত্রকে অনেক প্রাচীন হিন্দু[, বৌদ্ধ ও জৈন মন্দিরের চিত্র ও ভাস্কর্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। হিন্দু দেবতা কৃষ্ণের চিত্রায়ণে বাঁশি একটি অপরিহার্য অঙ্গ। কৃষ্ণ  রাধার প্রেম কাহিনির সাথে বাঁশি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বংশী কৃষ্ণের পবিত্র অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী বাদ্যযন্ত্র হিসেবেও খ্যাত। 

বাঁশি তৈরিতে লাগে বিশেষ ধরনের মুলিবাঁশ।বাঁশটির পুরুত্ত পাতলা হলে সুন্দর মিষ্টি আর নিখুত সুর আসবে। বাঁশ রোদে শুকিয়ে বাঁশি অনুসারে মাপমতো কেটে টুকরো করা হয়। এরপর টুকরোগুলো মসৃণ করে নিতে হয়। পরে কয়লার আগুনে পোড়ানো লোহার শলাকা দিয়ে ছিদ্র করা হয়। আঁকা হয় নকশা। এরপর মাটির প্রলেপ লাগিয়ে আবার আগুনে সেঁকে জলেতে ধুয়ে বাঁশিগুলো পুনরায় রোদে শুকানো হয়। শুকানোর পর বার্নিশ করা হয়। এরপর বাঁশিতে ফুঁ—সুর উঠল কিনা। 

তবে বর্তমানে আধুনিক উপায়ে হাতির দাঁত, ফাইবার গ্লাস আর নানা ধাতু দিয়েও বাঁশি তৈরি করা হচ্ছে।  বাঁশির দৈর্ঘ্য সাধারণত ৩০ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি) থেকে ৭৫ সেন্টিমিটারের (৩০ ইঞ্চি) মধ্যে হয়, আর এর পরিধি হয় মানুষের বুড়ো আঙুলের সমান।

বাঁশি সাধারণত তিন প্রকারের হয়ে থাকেঃ
  1. সরল বাঁশি
  2. আড় বাঁশি
  3. টিপরাই বাঁশি

বাঁশি নানান রকম স্কেলের হয়। যেমন ছয়, সাড়ে ছয়,সাত, সাড়ে সাত, আট, সাড়ে আট, নয়, সাড়ে নয়, এগারো, সাড়ে এগারো ইত্যাদি। এই স্কেল গোল বাঁশির বাঁশের দৈর্ঘ্য, ব্যাস, ছিদ্রের অবস্থান প্রভৃতির উপর নির্ভর করে ।
বাঁশির নম্বর
বাঁশির স্কেল
৮ ১/২ (সাড়ে আট)
C# (সি শার্প)
C ( সি )
B ( বি )
৬ ১/২ (সাড়ে ছয়)
A# (এ শার্প)
A ( এ )
৫ ১/২ (সাড়ে পাঁচ)
G# (জি শার্প)
G ( জি )


বাঁশিতে সংগীতের সাতটি স্বর (সা রে গা মা পা ধা নি) এবং পাঁচটি বিকৃত স্বর ( ঋ জ্ঞ ক্ষ দ ণ), সর্বমোট ১২ টি স্বরই পাওয়া যায় ।

বাঁশিতে সুর পরিবর্তন (টিউনিং) করা যায় না, তাই একজন বংশীবাদক কে ১২ টি স্কেলের ১২টি বাঁশিই সাথে রাখতে হয়।


বাঁশিতে
  • -উদারা সপ্তক এর পা ধা নি
  • -মুদারা সপ্তক এর সবগুলো স্বর
  • -তারা সপ্তক এর সা রা গা মা পা পাওয়া যায়
পা্‌ ধা্‌ নি্‌ সা রে গা মা পা ধা নি র্সা র্রে র্গা র্মা র্পা