শুক্রবার, ১২ জুলাই, ২০১৩

আইনস্টাইন ও প্রেম

ভালোবাসার সূত্রটা আইনস্টাইনের কাছে মনে হয় একটু ভিন্নই ছিল। অনেকটা তার আপেক্ষিকতার সুত্রের সাথেই মিলিয়ে নিয়েছিলেন এটিকে। বারবার প্রেমে পরাই যেন ছিল তার ভালোবাসাকে নিয়ে একটা পরীক্ষা। জীবনে অনেক মেয়ের প্রেমে পড়েছেন তিনি। প্রথম প্রেমের সুচনা হয়েছিল ১৮৯৫ সালে। আইনস্টাইনের বয়স তখন মাত্র ১৬ বছর।

সে বছর অক্টোবরে আইনস্টাইন ভর্তি হয়েছে আরাউ-এর একটি টেকনিক্যাল স্কুলের থার্ড ইয়ারে। সুইজারল্যান্ডের আরাউ মিউনিখের মাত্র ২০ মাইল পশ্চিমে। মিউনিখের স্কুল থেকে পালিয়ে গিয়েছিল আইনস্টাইন। ভেবেছিল স্কুল পাস না করেই টিকে যাবে পলিটেকনিকের ভর্তি পরীক্ষায়। ইউরোপের বিখ্যাত ফেডারেল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি বা পলিটেকনিকে ভর্তি হতে পারা সহজ কাজ নয়। অনেককে ধরে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পেলেও ভর্তি পরীক্ষায় পাস করতে পারেনি আইনস্টাইন। তাই বাধ্য হয়ে এই স্কুলে ভর্তি হয়েছে। এখানের পড়াশোনা শেষ করতে পারলে পলিটেকনিকে ভর্তির জন্য আরেকবার চেষ্টা করা যাবে। স্কুলের প্রফেসর ইয়স্ট ইউন্টেলারের বাড়িতে লজিংয়ের ব্যবস্থা হয়েছে এলবার্টের। মা-বাবার কাছ থেকে দুরে থাকতে হচ্ছে বলে মন খারাপ থাকার ফলে প্রথম কিছুদিন সে খেয়ালই করেনি যে ৩টি ফুটফুটে তরুণী মেয়ে আছে এই বাড়িতে।
রোজা, এনা, মেরি, প্রফেসর ইয়স্ট উইন্টেলারের ৩ কন্যা। মেরি সবার ছোট, সবার চেয়ে সুন্দরী। ১৮ বছর পেরিয়েছে ক’দিন আগে। তার চেয়ে দু’বছরের ছোট এলাবার্টকে মেরি প্রথমে কেমন একটা স্নেহের দৃষ্টিতে দেখতে শুরু করেছে। এলবার্ট মাঝেমধ্যে তার ঘরে একা একা বেহালা বাজায়। ঘরের বাইরে থেকে শুনেছে মেরি। এলবার্টের বেহালার হাত দারুণ তা মেরি বুঝতে পেরেছে। মেরি নিজে বাজায় পিয়ানো। পরিচয় হতে আর সময় লাগল না। কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেল এলবার্ট মেরি জুটিতে বেহালা-পিয়ানোর যুগল বাজনা বাজাচ্ছে। এই সুর এলবার্টের প্রাণে দোলা লাগাল অন্যভাবে। এলবার্ট মেরির প্রেমে পড়ে গেল। এই প্রেমে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস প্রবল। মেরি এলবার্টের ঘর গুছিয়ে রাখা থেকে শুরু করে জামা-কাপড়ও কাচতে শুরু করল। মেরির প্রেম-ভালোবাসার সঙ্গে এরকম সেবা-যত্ন পেয়ে এলবার্ট তো গদ গদ। মেরির সেবা-যত্নের বিবরণ দিয়ে মাকে চিঠি লিখল। পলিনও মেরির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে একটা চিঠি লিখলেন। মেরি চিঠিটা পেয়ে ভাবল অভিভাবক পর্যায় থেকে তাদের প্রেমের স্বীকৃতি পাওয়া গেছে।
তারপর কিছুদিন প্রেম শুধু প্রেম। আরাউ শহরতলির একপ্রান্তের জুরা পাহাড়ে, আরি নদীর ধারে, বিস্তীর্ণ প্রান্তরে হাতে হাত রেখে ঘুরে বেড়াল এলবার্ট আর মেরি। এলবার্টের শারীরিক গঠন মজবুত। মেরিকে সে একটা বাচ্চা মেয়ের মতো ‘আমার ছোট্ট সোনা’ বলে ডাকে। মেরির কাছে এলবার্ট হয়ে গেল ‘আমার প্রাণের দার্শনিক’। ৪ মাস পরে কিছুদিনের ছুটিতে এলবার্ট ইটালি গেলে সময় যেন কাটে না মেরির। এলবার্ট চিঠি লিখেছে ইটালি থেকে। কী কবিত্বময় সে চিঠির ভাষা, ‘আমার ছোট্ট পরী, সারা পৃথিবী আমার জন্য যা করেছে তুমি করেছো তার চেয়ে বেশি। তুমি আমার সুর্যালোক।’ এলবার্ট লিখেছে তার সময় কাটছে না মিলানে। ছুটি শেষে এলবার্ট ফিরে এলো। কিন্তু দ্রুত শেষ হয়ে গেল এলবার্টের স্কুলের পরীক্ষা। এবার জুরিখের পলিটেকনিক। ১৮৮৯-এর অক্টোবরে সেখানে ক্লাস শুরু করবে এলবার্ট। যাওয়ার আগে মেরির সঙ্গে অনেক পরিকল্পনা করল এলবার্ট। ভবিষ্যতের অনেক রঙিন স্বপ্ন দেখল, দেখাল। তারপর চলে গেল।

জুরিখে গিয়ে মেরির কথা প্রায় ভুলেই গেল আইনস্টাইন। পলিটেকনিকে তার ক্লাসে একজন মাত্র মেয়ে। মিলেইভা মেরিক। শান্ত, চুপচাপ, তন্বী মেয়েটি একবারও তাকায় না তাদের দিকে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে। তাকিয়ে তাকিয়ে দেখার মতো সুন্দরী সে নয়। কালো চুল, কোনরকম যত্নের ছাপ নেই তাতে। ক্লাসের সব ছেলেরাই দেখে মিলেইভাকে। একজন মাত্র মেয়ে ক্লাসে থাকলে তাকে সহপাঠিনীর চেয়ে মেয়ে হিসেবেই দেখতে অভ্যস্ত ছেলেরা। এলবার্ট একটু বেশি পরিমাণেই লক্ষ্য করছে তাকে। মেরির শারীরিক সৌন্দর্যের সঙ্গে মিলেইভার কোন তুলনাই চলে না। কিন্তু কেন এত আকর্ষণ অনুভব করছে এলবার্ট?

প্রথম বার্ষিক পরীক্ষায় দেখা গেল মিলেইভা ক্লাসের সেরা স্টুডেন্ট হয়ে গেছে। এলবার্ট বুঝতে পারল এই মেয়ের মন জয় করতে হলে আবেগ দিয়ে কাজ হবে না, গণিত আর পদার্থবিজ্ঞানের সমস্যা নিয়ে আলোচনা শুরু করতে হবে। কিন্তু দ্বিতীয় বর্ষের একটা সেমিস্টার পড়ার জন্য মিলেইভা চলে গেল হাইডেলবার্গ। শুরু হলো এলবার্ট আর মিলেইভার চিঠি খেলালেখি। এলবার্টের চিঠিতে বিজ্ঞানের খবরের পাশাপাশি হূদয়ের খবরও জায়গা করে নিতে লাগল। কতদিন আর চুপ করে থাকবে মিলেইভা। এলবার্টের প্রতিভা আর পদার্থবিজ্ঞানের নতুন নতুন আইডিয়ায় সে এরই মধ্যেই মুগ্ধ হতে শুরু করেছে। চিঠি লিখতে লিখতে প্রেম হয়ে গেল। ১৮৯৯-এর শুরুতে জুরিখে ফিরল মিলেইভা। এবার আর কোন জড়তাই নেই এলবার্ট আর মিলেইভার। এলবার্টের কাছে মিলেইভা হয়ে গেল ‘ডলি’, আর মিলেইভার কাছে এলবার্ট হলো ‘জনি’।

মিলেইভার পরিবার থেকে তেমন কোন বাধা এলো না। মিলেইভার বাবা মিলোস মেরিক জানেন বিয়ের বাজারে মিলেইভার দর খুব বেশি নয়, কারণ মিলেইভা সুন্দরী নয়, মিলেইভার শারীরিক খুঁত আছে, আর সবচেয়ে বেশি যেটা অযোগ্যতা বিয়ের বাজারে তা হলো মিলেইভা বিদুষী। ইউরোপের কোন ছেলেই বিদুষী মেয়ে বিয়ে করতে চায় না। সেক্ষেত্রে মেয়ে যদি নিজেই কাউকে পছন্দ করে সেটা তো খুশির কথা। কিন্তু ভয়ানক চটে গেলেন এলবার্টের মা পলিন আইনস্টাইন। মিলেভাইকে না দেখেই তিনি হাজারো খুঁত বের করতে লাগলেন মিলেইভার। মিলেইভা এলবার্টের চেয়ে চার বছরে বড়; সে তো বুড়ি। তার ছেলেমেয়ে হবে? তার ওপর খোঁড়া। সে জার্মান নয়, স্লোভিয়ান। মিলেইভা ইহুদি নয়। অইহুদি মেয়ে কীভাবে বিয়ে করান ছেলেকে? সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো এই মেয়ে তো বই পড়তে পড়তে নিজেই একটা বই হয়ে গেছে। ‘ছেলেতো বিয়ে করবে একটা মেয়েকে, বইকে নয়।’ পলিন গজগজ করতে লাগলেন। এলবার্টের বাবা কোনদিনই স্ত্রীর অবাধ্য হননি। এখানেও চুপ করে রইলেন। ছোটবোন মায়া তার দাদা এলবার্টকে খুব ভালবাসে। সে মাকে বোঝাতে চেষ্টা করল; কিন্তু ধমক খেয়ে দরজা বন্ধ ছাড়া আর কিছু করতে পারল না।

এলবার্ট মিলেইভা কিন্তু বিয়ের কথা তখনও ভাবেনি। মিলেইভার মন বিক্ষিপ্ত। যতই দিন যাচ্ছে এলবার্ট বদলে যাচ্ছে। নিজের ব্যাপারটা এলবার্ট যত ভাল বোঝে, মিলেইভার ব্যাপারটা সে বুঝতেই চায় না। দু’জনে যখন একসঙ্গে তৈরি করতে বসে ক্লাসের পড়া, এলবার্ট চায় মিলেইভা তার জন্য কফি তৈরি করে দিক। নিজে বইয়ে মুখ গুঁজে বসে থাকে আর এটা-ওটা এগিয়ে দেয়ার জন্য হুকুম চালায়। এলবার্টের জন্য রান্নাও করতে হয় তাকে। মিলেইভা ভেবে পায় না বিয়ের আগেই তাকে বউ মনে করছে নাকি এলবার্ট। এলবার্ট নিজের জামাকাপড়ও নিজে কাচতে পারে না। মিলেইভা এলবার্টের জামাকাপড় কাচতে শুরু করবে এখনি? কখনও না। এলবার্ট তার ময়লা জামাকাপড় পোস্ট করে পাঠিয়ে দেয় মেরির কাছে। মেরির কথা সে বলেনি মিলেইভাকে। মিলেইভা শুধু জানে যে এলবার্ট এক সময় থাকত মেরিদের বাড়িতে। এলবার্ট মেরিকে চিঠি লেখে না; কিন্তু নিজের ব্যবহারের ময়লা জামাকাপড় তাকে পাঠিয়ে দেয়। আর মেরিও তা ধুয়ে শুকিয়ে ইস্ত্রি করে পাঠিয়ে দেয় এলবার্টকে। এলবার্টের দেখাশোনা করতে করতে অনেকটা সময় চলে যায় মিলেইভার অথচ তাকেও এলবার্টের সঙ্গেই পরীক্ষা দিতে হবে। পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়তে লাগল মিলেইভা। এলবার্ট যেন দেখেও দেখে না মিলেইভার পিছিয়ে পড়া। মিলেইভার ক’জন মেয়ে বন্ধু মিলেইভাকে বোঝাতে এসেছিল যে এলবার্ট মিলেইভার দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে। মিলেইভা সেই বন্ধুদেরও এড়িয়ে চলে এখন। ১৯০০ সালের জুনে তাদের ফাইনাল পরীক্ষা। পাস করতে হলে ৬ পয়েন্টের মধ্যে ৫ পয়েন্ট পেতে হয়। এলবার্ট পেয়েছে ৪.৯ পয়েন্ট; সেটাকে ৫ পয়েন্টে ধরে এলবার্ট পাস করে গেল। কিন্তু মিলেইভা পাস করতে পারল না। সে পেয়েছে মাত্র চার পয়েন্ট। অথচ এলবার্টের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার আগে সে ৬-এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৫.৫ পেয়ে ফার্স্ট হয়েছিল।

চাকরি খুঁজছে এলবার্ট। কিন্তু তার রেজাল্ট খুব একটা ভাল না হওয়াতে কোথাও সুযোগ হচ্ছে না। তাছাড়া পলিটেকনিকে তার থিসিস এডভাইজার প্রফেসর হেনরিখ ওয়েবারের সঙ্গে তার স্লর্ক খুব খারাপ। এলবার্টের ধারণা ওয়েবারের জন্যই তার চাকরি হচ্ছে না কোথাও। এদিকে মিলেইভার জন্যও এক ধরনের মানসিক চাপ অনুভব করছে সে। মায়ের সঙ্গেও কয়েকবার ঝগড়া হয়ে গেছে এ ব্যাপারে। মিলেইভা পাস করতে না পারাতে বেশ মন খারাপ করে আছে। এলবার্ট কী করবে বুঝতে পারছে না। মিলেইভা এর মধ্যেও সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে এলবার্টকে। সে একটা ল্যাবরেটরির এসিস্ট্যান্টের কাজ নিয়েছে। ১৯০১ সালের প্রথম দিকে এলবার্ট চলে গেল মিলানে। যদি সেখানে কোন কাজ জোটে। মিলেইভা আবার প্রস্তুতি নিচ্ছে পরীক্ষার। এবার তাকে পাস করতেই হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এলবার্ট এসে হাজির হচ্ছে। সময় চলে যাচ্ছে। এলবার্টের সঙ্গ তার ভাল লাগে আবার পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে ভেবেও উতলা হয়। এলবার্ট এলে তার সঙ্গে বেড়াতে যেতে হয়। এপ্রিলে এলবার্ট তাকে নিয়ে গেল কোমো হ্রদে। হ্রদের স্বচ্ছ জলে নৌকায় চড়ল। রটোডেন্ড্রন আর ক্যামেলিয়া ফুলে ভরা এক বাগানঘেরা বাড়িতে কাটাল কয়েকরাত। কয়েকদিনের জন্য মিলেইভা যেন ভুলেই গেল যে দু’মাস পরেই তার পরীক্ষা। এলবার্টকে একটু বেশিই প্রশ্রয় দিয়ে ফেলল সে।

কিছুদিন পরেই বাবার চিঠি পেল মিলেইভা। পরীক্ষায় খারাপ করায় খুব মনখারাপ করেছেন তিনি। তাছাড়া এলবার্টের সঙ্গে সম্পর্কটা নিয়েও তিনি সন্তুষ্ট নন। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল মিলেইভার। পরীক্ষার আর কয়েক সপ্তাহ বাকি। শরীর খারাপ লাগতে শুরু করেছে মিলেইভার। বুঝতে পারল সে গর্ভবতী। কুমারী মাতা শব্দটি ইউরোপের মধ্যবিত্ত সমাজে অ্লৃশ্য। জানাজানি হয়ে গেলে ছি ছি পড়ে যাবে চার দিকে। এলবার্টকে বিয়ে করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই তার। এলবার্টকে চিঠি লিখে জানাল সে। কিন্তু এলবার্ট কোনরকম সিদ্ধান্তই জানাল না, যেন সব দায়িত্ব তার একার। এলবার্ট আর এলো না জুরিখে। প্রচণ্ড মানসিক ও শারীরিক চাপ নিয়ে পরীক্ষা দিল মিলেইভা। কিন্তু এবারো পাস করতে পারল না। আরেকবার যে চেষ্টা করবে সে সুযোগ আর নেই। পেটের শিশু বড় হচ্ছে। মিলেইভার জ্ঞানবিজ্ঞানের জগতে থাকার স্বপ্নের মৃত্যু হলো।
এলবার্টের মা পলিন মিলেইভার নামে কুৎসা রটাতে লাগলেন। এলবার্ট মিলেইভার খবর জানার পরে আর এরকবারও দেখা করেনি তার সঙ্গে। একবার দেখা হলেও হয়তো মনে কিছু বল পেতো মিলেইভা। মিলেইভাকে চলে যেতে হলো তার মায়ের কাছে সার্বিয়ায়। এলবার্ট সেপ্টেম্বরে সুইজারল্যান্ডের একটি স্কুলে অত্যন্ত কম বেতনের একটি চাকরিতে যোগ দিয়েছে। মিলেইভার কাছে আসার কোন আগ্রহই যেন আর নেই তার। চিঠিপত্রের সংখ্যাও কমে যেতে লাগল। নভেম্বর মাসে বাড়ির কাউকে কিছু না জানিয়ে মিলেইভা সুইজারল্যান্ডগামী ট্রেনে চেপে বসল। এলবার্টকে চিঠি লিখে জানিয়েছে তার আসার কথা। ৭ মাসের গর্ভবতী মিলেইভার কথা জানাজানি হয়ে গেলে চাকরিক্ষেত্রে এলবার্টের অসুবিধা হতে পারে ভেবে এলবার্টের কর্মস্থল থেকে কয়েকমাইল দুরে একটা হোটেলে উঠল মিলেইভা। দু’দিন অপেক্ষা করার পরেও এলবার্ট আসেনি সেখানে। বাড়িতে ফিরে আসতে হলো মিলেইভাকে। ডিসেম্বররে এলবার্ট সুইস পেটেন্ট অফিসে কেরানির পদে যোগ দিল, বিয়ে করে খরচ চালানো যাবে এই বেতনে। ১৯০২ সালের জানুয়ারিতে মিলেইভা একটি ফুটফুটে কন্যার জন্ম দিল। এলবার্ট আইনস্টাইন আর মিলেইভা মেরিকের বিবাহ বহির্ভূত সন্তান লিজেল। এলবার্ট কোনদিনই দেখেনি তার এই মেয়েকে। দেখার কোন আগ্রহও প্রকাশ করেনি। পরে লিজেলের কী হয়েছে তা আজও জানা যায়নি। চাকরি পাওয়ার পরে এলবার্ট লিখেছে মিলেইভাকে খুব শিগগিরই বিয়ে করবে। কিন্তু তারপরেও প্রায় একবছরে অপেক্ষা করতে হয়েছে মিলেইভাকে।

১৯০৩ সালের জানুয়ারির ৬ তারিখে বিয়ে হয় এলবার্ট আইনস্টাইন আর মিলেইভা মেরিকের। এলবার্টের বয়স তখন ২৪ আর মিলেইভার ২৮। শুরু হলো এলবার্ট-মিলেইভার দাম্পত্য জীবন। এলবার্ট সপ্তাহের ৬ দিন ব্যস্ত থাকে অফিসের কাজে আর ছুটির দিনে ব্যস্ত থাকে পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণায়। বাড়ির কাজকর্ম আর এলবার্টের দৈনন্দিন জাগতিক ও জৈবিক চাহিদা মেটানো ছাড়া মিলেইভা সঙ্গে এলবার্টের আর কোন মানসিক যোগাযোগই ঘটে না। লিজেলের কোন উল্লেখও নিষিদ্ধ এখানে। লিজেলের দায়িত্ব নেন মিলেইভার মা-বাবা। সেবছর পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন মিলেইভার একসময়ের আদর্শ মেরিয়া ্লোদভস্কা; বিয়ের পরে যিনি মেরি কুরি হয়েছেন। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে মিলেইভার। তবুও আশা আছে এলবার্টের কাজ যুগান্তকারী হবে। এলবার্ট একদিন অনেক বড় হবে তাতে মিলেইবার কোন সন্দেহ নেই। পরের বছর জন্ম নিল এলবার্ট আইনস্টাইন দম্পতির প্রথম সন্তান হ্যান্স এলবার্ট। ১৯০৫ সালে এলবার্টের প্রমোশন হলো অফিসে। চারটি সায়েন্টিফিক পেপার পাবলিস করল এলবার্ট। এই পেপারগুলোই পরে সারা পৃথিবীর পদার্থবিজ্ঞানকে নতুন ভাবে ঢেলে সাজানোর ব্যবস্থা করে দেয়।

দ্রুত বিখ্যাত হয়ে যাচ্ছেন আইনস্টাইন। পরের বছর ইউনিভার্সিটি অব জুরিখ থেকে পিএইচডি অর্জন করলেন তিনি। ১৯০৮ সালে সেই ইউনিভার্সিটিতে যোগ দিলেন লেকচারার পদে। পরের বছরই থিওরেকিটক্যাল ফিজিক্সের প্রফেসর হয়ে গেলেন। মিলেইভা খুশি তার ‘জনি’র এই উন্নতিতে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে প্রফেসর আইনস্টাইনের জীবনে নতুন নারীর আভির্ভাব ঘটছে। ব্যাপারটা মিলেইভা বুঝতে পারছেন। এলবার্টের কাছে আসা একটি চিঠি তার হাতে পড়েছে। এনেলি মেয়ার-স্মিথ নামের মেয়েটির চিঠি পড়ে বোঝা যাচ্ছে এলবার্টও তাকে চিঠি লেখে। এলবার্টকে দেখা করতে লিখেছে এনেলি। লেখা পড়ে কেমন যেন গোপন প্রণয়ের গন্ধ পাচ্ছেন মিলেইভা। এলবার্ট তাকে কোনদিনই বলেনি এনেলির কথা। এলবার্টকে জিজ্ঞাসা করেও কোন সদুত্তর পাওয়া গেল না। মিলেইভা খবর নিয়ে জেনেছেন জর্জ মেয়ার নামে এক উকিলের বউ এই এনেলি। মিলেইভা একটা চিঠি লিখলেন জর্জ মেয়ারকে তার বউকে সামলানোর জন্য। রাগের মাথায় লেখা চিঠিটা একটু বেশি কড়া হয়ে গেছে। এলবার্ট জানতে পারলেন মিলেইভার চিঠির কথা। অন্য কোন উপায় না থাকলে পুরুষরা স্ত্রীর উপর রেগে যান। এলবার্টও রেগে গেলেন। তিনি তো মিলেইভাকে বলতে পারেন না যে এনেলির সঙ্গে এলবার্টের পরিচয় সেই জুরিখের পলিটেকনিকে পড়ার সময়। এনেলির দিদির বাসায় তুমুল আড্ডা চলত তখন। ১৭ বছরের উচ্ছল সুন্দরী এনেলিকে দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল ১৯ বছরের এলবার্ট। মিলেইভার সঙ্গেও তখন প্রেম চালিয়ে যাচ্ছে এলবার্ট। তাই এনেলির খাতায় কয়েক লাইন কবিতা লিখে দেয়া আর সুযোগ বুঝে কয়েকটা চুমুর বেশি এগোতে পারেনি তখন। এখন এত বছর পরে এলবার্টের খবর পেয়ে যোগাযোগ করেছে এনেলি। এলবার্ট গোপনে অন্তরঙ্গ সময় কাটায় মাঝে মধ্যে এনেলির সঙ্গে। তা তো বলা যায় না মিলেইভাকে। ছোটখাট ঝগড়া হতে লাগল। আইনস্টাইন সমস্যার সমাধান করতে চাইলেন অন্যভাবে। মিলেইভা আবার গর্ভবতী হলেন। ১৯১০ সালে তাদের দ্বিতীয় পুত্র এডওয়ার্ডের জন্ম হলো। এদিকে প্রায় একই সময়ে এনেলির একটি কন্যা সন্তান হয়। অনেকেই মনে করেন এনেলির কন্যা এরিকার জন্মদাতা স্বয়ং অ্যালবার্ট আইনস্টাইন। পরের বছর আইনস্টাইন জার্মান ইউনিভার্সিটি অফ প্রাগে যোগ দিলেন। আইনস্টাইন পরিবার প্রাগে এলো সঙ্গে সমস্যাও এলো নতুন করে। এলসার আবির্ভাব ঘটল আইনস্টাইনের জীবনে।

এলবার্টের বাবার বাবা আব্রাহাম আর এলসার বাবার বাবা রাফের আপন ভাই। আর এলবার্টের মা পলিন আর এলসার মা ফ্যানি আপন বোন। কাছের অর্ডারে প্রাধান্য দিলে এলসা এলবার্টের আপন মাসতুতো বোন। এলসা এলবার্টের চেয়ে ৩ বছরের বড়। ২০ বছর বয়সে এলসা বিয়ে করে টেক্সটাইল মার্চেন্ট ম্যাক্স লোয়েনথালকে। তাদের ঘরে দুই কন্যা; আইলস আর মারগট। একপুত্রও জন্মেছিল; কিন্তু বাঁচেনি। ১৯০৮ সালে ম্যাক্সকে ডিভোর্স করে এলসা এখন বার্লিনে তার মা-বাবার এপার্টমেন্টের উপর তলায় থাকে। এলবার্টের উন্নতির খবর এখন যে কোন সোশ্যাল পার্টিতেই আলোচিত হয়। এলসার এখন কাউকে খুব দরকার, তার মেয়েদের জন্য এবং তার নিজের জন্যেও বটে। এলসা চিঠি লিখল এলবার্টকে। এলবার্ট হঠাত আবিষ্কার করল এলসা মিলেইভার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দরী, অনেক বেশি স্মার্ট। বার্লিনে আসার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লেন আইনস্টাইন। জুরিখের পলিটেকনিকে এক বছর প্রফেসরি করে ১৯১৪ সালে বার্লিন ইউনিভার্সিটিতে যোগ দিলেন এলবার্ট। মিলেইভা চাননি এলবার্ট বার্লিনে আসুক। কিন্তু মিলেইভার ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোন মুল্যই নেই তখন এলবার্টের কাছে।

আইনস্টাইন পরিবার বার্লিনে এলো এপ্রিলে। এখানে পার্টিতে আইনস্টাইনের পাশে মিলেইভার বদলে দেখা যেতে লাগল একটু বেশি মাত্রায় সাজগোজ করা বেশি মাত্রায় উচ্ছল আটত্রিশোর্ধ এলসাকে। মিলেইভার কানে সব কথাই আসে, নানারকম ভাবে পল্লবিত হয়েই আসে। কিন্তু মিলেইভার কোন কথাই এলবার্টের কানে ঢোকে না। বরং মিলেইভার জন্য লম্বা এক ‘কোড অফ কন্ডাক্ট’ তৈরি করলেন ইলবার্ট আইনস্টাইন। এলবার্ট লক্ষ্য করেছেন কিছুদিন থেকে ডাকলেও সাড়া দেয়া না মিলেইভা। তার কোনড অফ কন্ডাক্টে মিলেইভার উদ্দেশ্যে এটাও জুড়ে দিলেন, ‘আমি ডাকার সঙ্গে সঙ্গেই সাড়া দিতে হবে তোমাকে।’ এর যেন যুদ্ধ ঘোষণা করা মিলেইভার সঙ্গে। এদিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে আগস্টে। বার্লিন আর নিরাপদ নয় বলে আইনস্টাইন ছেলেদেরসহ মিলেইভাকে পাঠিয়ে দিলেন জুরিখে। এলবার্ট রয়ে গেলেন বার্লিনে। যেখানে বাসা নিলেন সেখান থেকে দেখা যায় এলসার এপার্টমেন্ট। মিলেইভা এলবার্টের জন্য অপেক্ষা করলেও আইনস্টাইন সময় করতে পারেন না স্ত্রী বা সন্তানদের দেখতে যাওয়ার। বরং মিলেইভার কাছে ডিভোর্স দাবি করলেন। মিলেইভা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন। এ খরব পেয়ে আইনস্টাইন ভাবলেন মিলেইভা ভান করছে।

মিলেইভা বুঝতে পারছেন না কী করবেন। ছেলেদের খরচ জোগাবেন কীভাবে। ইউনিভার্সিটির ডিগ্রি নেই তার। স্কুল পাসের সার্টিফিকেট দেখিয়ে কোন চাকরি তিনি পাবেন না। তাছাড়া শরীর খারাপ থাকে প্রায় সময়। ওদিকে আইনস্টাইন তখন আরও উন্নতি করছেন। ইউরোপিয়ান ফিজিক্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন, জেনালের থিওরি অব রিলেটিভিটির পেপার প্রকাশিত হয়েছে। ফিজিক্সে নোবেল পুরস্কার পাওয়াটা এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। অনেক ভাবলেন মিলেইভা। তার প্রিয় জনিকে তিনি আর ধরে রাখতে পারবেন না। এলবার্ট তাকে বিয়ে করেছে শুধু কর্তব্যের খাতিরে। তাহলে ছেলেদের মানুষ করার কর্তব্যও সে করবে। এলবার্ট ডিভোর্স চাচ্ছে। তার বিনিময়ে মিলেইভা চাইবে এলবার্টের নোবেল পুরষ্কারের টাকা। যদিও নোবেল পুরষ্কার সে পাবে কি না বা কখন পাবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। মিলেইভার শর্তে রাজি না হয়ে উপায় ছিল না এলবার্টের।
মিলেইভা ডিভোর্সে রাজি হয়েছে। কাগজপত্র তৈরি করা আর নতুন বিয়ের প্রস্তুতি চলল। এলসাকে বিয়ে করবেন ভাবতে যে রকম রোমাঞ্চ অনুভব করা উচিত সে রকম রোমাঞ্চ অনুভব করছেন না এলবার্ট। তার মন টানছে এলসার মেয়ে আইলস। ২০ বছরের সুন্দরী আইলসকে দেখলে একধরনের শারীরিক আকর্ষণ অনুভব করেন এলবার্ট। আইলসকে সে কথা বলেছেনও তিনি। আইলস যদিও রুডলফ কেউজারের সঙ্গে প্রেম করছে; কিন্তু আইনস্টাইনের প্রতিও তার আকর্ষণ কম নয়। এলসাকে জানিয়ে দিয়েছেন এলবার্ট মা বা মেয়ে যে কাউকে বিয়ে করতে তার কোন আপত্তি নেই। তারা মা-মেয়ে আলোচনা করে যেন ঠিক করে নেয় কে বিয়ে করবে এলবার্টকে। এলসার জন্য এ যে কত বড় অপমানজনক কথা তা যেন এলবার্ট বুঝতেই পারছেন না। এলসার ইচ্ছে হলো না মেয়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে। আইলসের ওপর ছেড়ে দিলেন তিনি সিদ্ধান্তের ভার। আইলস বুঝতে পারল মায়ের মনোভাব। সে তার মাকে জায়গা ছেড়ে দিল। ১৯১৯ সালে এলবার্ট আইনস্টাইনের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে গেলে মিলেইভা মেরিকের। এলবার্ট সেদিনের তারিখটার দিকে নজরই দিলেন না। সেদিন ছিল ১৪ ফ্রেরুয়ারি। ভ্যালেন্টাইনস ডে। এই দিনে ভালবাসার মানুষ কাছে আসে। কিন্তু তারা চিরদিনের মতো দুরে সরে গেলেন।
মিলেইভার সঙ্গে ডিভোর্সের ৪ মাস পরে এলবার্ট বিয়ে করলেন এলসাকে। এলসা মিশ্র অনুভুতি নিয়ে আইনস্টাইনের ঘর করতে শুরু করলেন। এলবার্টকে তিনি ঠিক বিশ্বাস করতে পারেন না। তার দুই মেয়ে তাদের সঙ্গে আছে। তাদের নিয়েও তার চিন্তা। এলবার্ট জড়িয়ে পড়েছেন ইহুদিদের আলাদা রাষ্ট্রের ধারণার সঙ্গে। জার্মানিতে সাম্প্রদায়িকতা দানা বাঁধছে। ১৯২১ সালে এলবার্ট আর এলসা আমেরিকা ভ্রমণে গেলেন। এলসা চোখে চোখে রাখেন এলবার্টকে যতটুকু পারেন। রেস্টুরেন্টের ঘামেভেজা ওয়েট্রেসদের প্রতিও আইনস্টাইনের আকর্ষণ চোখে পড়ে এলসার। ১৯২২ সালে ঘোষণা করা হলো ১৯২১ সালের পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে এলবার্ট আইনস্টাইনকে। আইনস্টাইন কথা রেখেছেন। নোবেল পুস্কারের ১ লাখ ২১ হাজার ৫৭২ সুইডিশ ক্রোনার পাঠিয়ে দিলেন মিলেইভাকে। মিলেইভা সেই টাকায় ৩টি বাড়ি কিনে তার একটিতে ছেলেদের নিয়ে থাকেন।

১০
আইনস্টাইন এখন বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তি। পৃথিবীর নানা জায়গার বিখ্যাত সব মানুষের সঙ্গে পরিচয় ঘটছে নিয়মিত। এসময় বু হ্যান্স বুশামের ভাগ্নি বেটি নিউম্যানের প্রতি দুর্বল হয়ে গেলেন এলবার্ট। বেটিকে নিজের কাছে রাখার জন্য আইনস্টাইন তাকে নিজের সেক্রেটারি নিযুক্ত করলেন। লোক হাসাহাসি করাতে চাইলেন না এলসা। সপ্তাহে দু’দিনের বেশি দেখা করবে না এই শর্তে সেক্রেটারিকে মেনে নিলেন এলসা। এক বছরে মধ্যেই সেক্রেটারির প্রতি সব আকষর্ণ হারিয়ে ফেললেন এলবার্ট। এবার কিছুদিন এলসাকে ফাঁকি দিয়ে মার্গারেট লেনবাখ নামে এক অস্ট্রিয়ান মহিলার সঙ্গে সময় কাটালেন আইনস্টাইন। মার্গারেটের পরে টনি মেন্ডেল নামের মহিলা গাড়ি পাঠাতে লাগল এলবার্টের অফিসে। এলবার্ট অফিসের পরে রাতের শোতে থিয়েটারে যেতে লাগলেন টনির সঙ্গে। কিন্তু কিছুদিন পরে হার্টের সমস্যা দেখা দিল আইনস্টাইনের। ডাক্তারে পরামর্শে এক বছরে বেডরেস্টে থাকতে হলো তাকে। এ সময় তার সেক্রেটারি হয়ে এলেন হেলেন ডুকাস। ছিপছিপে লম্বা প্রচণ্ড ব্যক্তিত্বময়ী যুবতী হেলেনের সঙ্গে এলাবার্টের যখন প্রথম দেখা হয় তখন তিনি অসুস্থ হয়ে শুয়ে আছেন বিছানায়। কাজ বুঝে নিতে একটুও সময় লাগল না হেলেনের। কাজের সঙ্গে সঙ্গে আইনস্টাইনের পুর্ণ নিয়ন্ত্রণ এখন হেলেনের হাতে। আইনস্টাইনের ব্যক্তিগত চিঠিও হেলেন আগে পড়ে। বেশিরভাগ চিঠির উত্তরও হেলেনই দিয়ে দেয় আইনস্টাইনের হয়ে। হেলেনকে এড়িয়ে সাংবাদিকরাও দেখা করতে পারে না আইনস্টাইনের সঙ্গে। আইনস্টাইনের জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত হেলেন ছিলেন তার সঙ্গে। বিয়েও করেননি হেলেন।

১১
১৯৩৩ সালে জার্মানিতে নাৎসিরা ক্ষমতায় আসার পরে দেশ ছাড়তে হলো আইনস্টাইনকে। ইউরোপ হয়ে আমেরিকায় এসে পৌঁছালেন এলসা, এলবার্ট আর হেলেন। অনেক দিন রোগে ভুগে ১৯৩৬ সালে মারা গেলেন এলসা। এলসার মৃত্যুর পরে আর বিয়ে করেননি আইনস্টাইন। বিবাহ ব্যবস্থার প্রতিই আস্থা নেই আইনস্টাইনের। বিভিন্ন জনের কাছে তিনি বলতে শুরু করেছেন ‘মানুষ কখনোই একজনের প্রতি সারাজীবন বিশ্বস্ত থাকতে পারেনা। প্রত্যেক বিবাহিত পুরুষই মনে মনে পরনারীতে আসক্ত আর প্রত্যেক বিবাহিত রমণীই অন্য পুরুষকে কামনা করে।’ আইনস্টাইনের সব দায়িত্ব এসে পড়ল হেলেনের হাতে। আইনস্টাইনের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সঙ্গে ছিলেন হেলেন ডুকাস। ১৯২৮-এর এপ্রিল থেকে ১৯৫৫ এর এপ্রিল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৭ বছর। আইনস্টাইনের দুই স্ত্রীর কেউই এত দীর্ঘ সময় আইনস্টাইনের সঙ্গে ছিলেন না বা থাকতে পারেন নি।

সম্পাদনাঃ এম এস এস মামুন
ফেসবুক প্রোফাইল লিঙ্কঃ https://www.facebook.com/m.s.s.mamun
১২-০৭-১৩