
সবেমাত্র
বাংলা উচ্চারণ করে পড়তে শিখেছি, এবার আম্মুর কড়া নির্দেশ আমাকে আরবি পড়া
শিখতে হবে। যথারীতি আব্বু একদিন সন্ধ্যায় বাজার থেকে কায়দা বই এনে দিলেন।
ঘুমের সিডিউল হয়ে যাওয়ায় সেদিন সন্ধ্যায় আর বইটি খুলে দেখা হয়নি। তারপর দিন
সকালে ঘুম থেকে উঠেই হাত-মুখ ধুয়ে ভাবের সহিত কায়দা বইটি নিয়ে বারান্দায়
পাটি বিছিয়ে বসলাম। বারান্দার পাশেই রান্না ঘরে আম্মু রুটি তৈরী করতেছিলেন।
আমি কায়দা বইটি খুললাম, খুলেই মাথায় আকাশ থেকে বাজ পরল! কি যেন সব
হিজিবিজি কিছুই বুঝতে পারছিনা। যথারীতি আম্মুর কাছে চিৎকার করে অভিযোগ আমি
এসব হিজিবিজি কিছু পড়তে পারবনা। বিষয়টি উপলব্ধি করার জন্য আম্মু রান্না ঘর
থেকে উঠে এসে আমার কাছে আসলেন। এসে দেখলেন যথারিতী বাংলা বই যেভাবে খুলি
স্বাভাবিকভাবেই আমি সেইভাবে বইটি খুলেছি, তার মানে আমি যেই পৃষ্ঠাটি বইয়ের
প্রথম পৃষ্ঠা মনে করেছিলাম আসলে সেটি ছিল বইটির শেষ পৃষ্ঠা এবং সেখানে কিছু
আরবি শব্দের গঠন নিয়ে আলোচনা থাকায় আমার কাছে সেগুলো হিজিবিজি মনে হওয়াটা
স্বাভাবিক ছিল। আম্মু বুঝিয়ে দিলেন আরবি বই উল্টো দিক দিয়ে খুলতে হয়। তারপর
উল্টো দিক দিয়ে প্রথম পাতা উল্টিয়েই দেখি কিছু বাংলা লেখাও দেখতে পাওয়া
যাচ্ছে। জীবটা মনে হয় এবার বুকে ফিরল। আম্মু আবার রান্না ঘরে চলে গেলেন আমি
আরবি হরফের বাংলা উচ্চারণগুলো বানান করে জোরে জোরে পড়তে শুরু করলাম- 'সা'
'তা' 'বা' 'আলিফ'। আম্মু রান্না ঘর থেকে চিৎকার করে বলতে শুরু করল, এই বাবু
আরবি পড়া বাম দিক থেকে ডান দিক না, ডান দিক থেকে বামে পড়তে হয়। আমি আবার
বললাম, আমি এতোদিন পড়তে পড়তে পড়া শিখে গেলাম আর তুমি এখন আমাকে শিখাচ্ছ বাম
দিক থেকে না, ডান দিক থেকে পড়তে হবে। আম্মু আবার একটু রেগেই বলল, তুই আমার
থেকে বেশি জানিস। যাহা আজ্ঞে জাহাপনা এবার ডান দিক থেকেই আবার জোরে জোরে
পড়তে শুরু করলাম- 'ফলিআ' 'বা' 'তা' 'সা'। আমার টার্গেট ছিল আমি প্রথম চারটা
হরফ মুখস্থ করে পরের হরফগুলো পরে পড়ব। তাই আবার জোরে জোরে পড়তে শুরু
করলাম- 'ফলিআ' 'বা' 'তা' 'সা'। এবার আম্মুর দিকে তাকাই দেখি আম্মু আমার
বেতাল হেসে গড়াগড়ি দিচ্ছে। আম্মু হয়ত প্রথমবারের বেলায় মনোযোগ দিয়ে শুনেনি
কিন্তু দ্বিতীয়বারের বেলায় ঠিকই শুনেছে। আমি আম্মুকে বললাম, তুমি হাসতেছ
কেন? আম্মু আমার কথার উত্তর না দিয়ে দেখি হেসেই যাচ্ছে। আমি বুঝলাম আমার
কোথাও মারাত্মক ভূল হয়েছে এবং আম্মু সে কারণেই হাসতেছে। আমি আম্মুকে বললাম,
তুমি এভাবে হাসলে আমি আর পড়বই না। এবার আম্মু হাসি থামিয়ে বললেন, আরে
গাঁধা তোকে তো আমি আরবি হরফগুলো ডান দিক থেকে পড়তে বলেছি আর তুই কিনা হরফের
উচ্চারণগুলো উল্টো করে পড়তেছিস। আম্মু ডান দিক থেকে পড়তে বলাই আমার মাথায়
সেটাই ঢুকেছিল তাই 'আলিফ'কে আমি উচ্চারণ করেছি 'ফলিআ' এবং বাকি তিনটা হরফ
'বা' 'তা' 'সা' শুধুমাত্র একটি বর্ণের সাথে স্বরবর্ণ থাকায় সেভাবে ঠিকই
উচ্চারণ করেছি। এই ঘটনাটি আমার মনে পড়লে এখনো আমার অনেক হাসি পায় এবং মাঝে
মাঝে নিজে নিজেই হাসি।
(০৯-০৬-১৩)